নাসিকে সরকারের ইচ্ছায় জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেয়নি

Slider সারাদেশ

384468cd6c9e570826dff733c5675a35-14

নারায়ণগঞ্জ; সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সরকারের শীর্ষ মহলের ইচ্ছায় জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী দেয়নি। তবে জাপা নেতারা বলছেন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ওপর দলের আস্থা নেই। সে জন্য জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেয়নি।

এদিকে নির্বাচনে কৌশল ঠিক করতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে গতকাল রোববার বৈঠক করেছেন দলের মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের ভূমিকা ও অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

জাপার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা সরকারের একটি সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে জানান যে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে জাপা প্রার্থী দিক, তা তাঁরা চান না। এরপর থেকে এরশাদসহ দলের নীতিনির্ধারকেরা নির্বাচনের বিষয়ে চুপচাপ আছেন।

এ ছাড়া জাপায় সরকারঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নেতারাও নানা যুক্তি দিয়ে এরশাদকে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। তাঁরা এরশাদকে এই বলে বোঝান যে এবার নতুন প্রেক্ষাপটে দলীয়ভাবে সিটি নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচনে
জাপা প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অসুবিধায় পড়তে পারেন। তাতে লাভবান হবে বিএনপি।

দলীয় সূত্র জানায়, রাডার ক্রয় দুর্নীতি এবং তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর দুটি মামলা নিয়ে এরশাদ বেশ চাপে আছেন। বিমানের রাডার ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিচারের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে আবার নতুন করে সাক্ষ্য নিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালে পাওয়া বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়ার অভিযোগে ১৯৯১ সালে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর একটি মামলা নিয়েও চাপে আছেন এরশাদ। ৩০ নভেম্বর মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় এরশাদ সরকারের চাপে নির্বাচন বর্জন করেও শেষ পর্যন্ত ফিরতে বাধ্য হন।

জানতে চাইলে জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলের ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ বলে জানান। আর জাপার চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ড আছে। এর ১৭টি ওয়ার্ড পড়েছে জাপার সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। বাকি ১০টি ওয়ার্ড পড়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। এ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পাশঘেঁষা নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেনও জাপার।

দলটির নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশন এলাকার সংসদীয় প্রতিনিধি ওসমান পরিবারের দুই সদস্য। এ কারণে দলের অনেকে নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানকে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ধরে রেখেছিলেন। এ ছাড়া জাপার নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি আকরাম আলীও মেয়র পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। জানতে চাইলে আকরাম আলী  বলেন, ‘পার্টি নির্বাচন করতে না চাওয়ায় মনোনয়ন চাইনি।’

দলের আরেকটি সূত্র বলছে, নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। এবার সিটি নির্বাচনে প্রার্থী না দিয়ে জাপা তার প্রতিদান দিয়েছে।

জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে অপমান হয়েছি। এখন নারায়ণগঞ্জে মেয়র নির্বাচনে গেলে আপনারাই লিখবেন, জাপা ২০ হাজার ভোট পেয়েছে। দলকে অপমান করতে এই নির্বাচনে যাব কেন?’

আইভীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক

 নির্বাচনে কৌশল ঠিক করতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। গতকাল আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত দুজন নেতা বলেন, দলীয় প্রার্থী আইভী জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনি যাবেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ভোট চাইবেন। শামীম ওসমানের কাছেও যাবেন। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন আইভী।

বৈঠক সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংখ্যালঘু নেতাদের নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারে জোরেশোরে অংশ নিতে বলার সিদ্ধান্ত হয়।

প্রায় দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে আইভী তাঁর নির্বাচনী কৌশল কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শ নেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি ও আবদুর রহমান; সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম ও মুহিবুল হাসান নওফেল, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে দীপু মনি ও আবদুর রহমান নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে আবদুর রহমান  বলেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য দলের সবাইকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করা যায় এবং মাঠে নামানো যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা আইভীকে আশ্বস্ত করেছেন যে নেতা-কর্মীদের কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ করলে শাস্তি পাবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠের চিত্র, মাঠে দলের ভূমিকা ও নির্বাচনী কৌশলের বিষয়গুলো দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে অবহিত করার কথা জানান।

জানতে চাইলে মুহিবুল হাসান  বলেন, সেলিনা হায়াৎ আইভী তাঁর নির্বাচনী কৌশলের কথা জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও তাঁকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থীকে কীভাবে জয়ী করা যায়, মূলত সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *