ঢাকা; হিলারি ক্লিনটন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি- এ খবর পুরনো হয়ে গেছে। জনমত জরিপ, পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী সবকিছু মিথ্যা প্রমাণ করে তাকে পরাজিত করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। যদিও পপুলার ভোট হিলারিই বেশি পেয়েছেন। আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়ে সারা দুনিয়ায় এ ফল নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্বব্যবস্থা কী বদলে যাবে?
এসব আলোচনা যখন চলছে তখন মার্কিনিদের নিয়ে বাংলাভাষার অন্যতম জনপ্রিয় লেখক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের একটি চমকপ্রদ লেখা নজরে এসেছে। দুই যুগেরও বেশি সময় আগে প্রকাশিত তার বই মে ফ্লাওয়ার-এ তিনি পরিষ্কার লিখে গেছেন, আমরা আমাদের দেশে একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের কথা চিন্তা করতে পারি। ভাবতে পারি। ওরা তা পারে না। আসছে একশ’ বছরেও এই আমেরিকায় কোনো মহিলা প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হবে না। অতি সুসভ্য এই দেশ তা হতে দিবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে লেখকদের একটি সম্মিলনে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতার নানা বয়ান এসেছে এ বইয়ে। প্রাসঙ্গিকভাবে তিনি লিখেছেন অন্যান্য বিষয়ও। ওই বইতে হুমায়ূন আহমেদ আরো লিখেছেন, একটি আমেরিকান পরিবারের জীবনচর্চা চিন্তা করলেই কষ্ট হয়। ওরা কি হারাচ্ছে তা বুঝতে পারে না। আমরা যারা বাইরে থেকে আসি বোঝাতে পারি কিংবা বোঝার চেষ্টা করি।
আমি আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় যা বুঝেছি তা হলো, এদের সবার চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ। বস্তুকেন্দ্রিক। একটি মেয়ের জীবনের সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষা হলো চিয়ার লিডার হবে। ফুটবল খেলার মাঠে স্কাট উঁচিয়ে নাচবে। স্কাটের নিচে তার সুগঠিত পদযুগল দেখে দর্শকরা বিমোহিত হবে। এই তার সবচেয়ে বড় চাওয়া। একটি ছেলে চাইবে মিলিওনিয়ার হতে।
এই অতি সভ্য (?) দেশে আমি দেখি মেয়েদের কোনো সম্মান নেই। একজন মহিলাকে তারা দেখবে একজন উইম্যান হিসেবেই। একটি মেয়ের যে মাতৃরূপ আছে, যা আমরা সব সময় দেখি, ওরা তা দেখে না। একটি মেয়ে যতদিন পর্যন্ত শারীরিকভাবে আকর্ষণীয়, ততদিন পর্যন্তই তার কদর।
যা কিছু হাস্যকর, তার সবই এদের ভাষায় মেয়েলি, এফিমিনেট। শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য, এই দেশে মেয়েরা একই যোগ্যতায় একই চাকরিতে পুরুষের চেয়ে কম বেতন পান। বিমানের ক্যাপ্টেন যদি মহিলা হন তাহলে বিমানের যাত্রীদের তা জানানো হয় না। ক্যাপ্টেন পুরুষ হলে তবেই শুধু বলা হয়- আমি অমুক, তোমাদের বিমানের ক্যাপ্টেন। মহিলা ক্যাপ্টেনের কথা বলা হয় না। কারণ, মহিলা বিমানের দায়িত্বে আছেন জানলেই যাত্রীরা বেঁকে বসতে পারেন। আমাদের দেশে মেয়েদের অবস্থা খারাপ, তবু একজন মহিলা ডাক্তার একজন পুরুষ ডাক্তারের মতোই বেতন পান। কম পান না।
জাতির শরীর যেমন আছে আত্মাও আছে। এই দেশের শরীরের গঠন চমৎকার কিন্তু আত্মা। এর আত্মা কোথায়?
হুমায়ূন আহমেদ ওই বইয়ে আরো লিখেছেন, আমেরিকানরা খুব জরিপের ভক্ত। সব কিছুরই জরিপ হয়ে যাচ্ছে। জরিপ চালাচ্ছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। টাকার বিনিময়ে তারা জরিপ করে দেবে। হেন বিষয় নেই যার ওপর তারা জরিপ করেনি।
সবার ধারণা আমেরিকানরা খুব বকবক করে। এই ধারণা হয়েছে আমেরিকান টুরিস্টদের দেখে। টুরিস্টরা সত্যি সত্যি বকবক করে। এরা বাড়ি থেকে বের হয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে ‘ফান’ করার জন্যে। এই বকবকানি সম্ভবত ফানের অংশ। ওদের নিজ ভূমিতে ওরা মুখবন্ধ জাতি। অন্তত আমার তা-ই মনে হয়েছে। অপ্রয়োজনে কোনো কথা বলবে না। বেশিরভাগের কথাবার্তাই ‘আজকের আবহাওয়া অসাধারণ’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তর্ক করতে এরা তেমন পছন্দ করে না। কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ যদি কথা বন্ধ করে দেয় তাহলে বুঝতে হবে ওরা এই মত সমর্থন করছে না।
বইয়ের অন্য এক বর্ণনায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, আমি এবং গুলতেকিন চাঁদের পাথরে হাত রাখলাম। আমার রোমাঞ্চ বোধ হলো। গভীর আবেগে চোখে পানি এসে গেল। কত না পূর্ণিমার রাত মুগ্ধ চোখে এই চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় ও আবেগে অভিভূত হয়েছি। সেই চাঁদ আজ স্পর্শ করলাম। আমার এই মানব জীবন ধন্য।
আমেরিকার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাবোধে মন দ্রবীভূত হলো। আমেরিকানদের অনেক দোষ-ত্রুটি, তবু তো এরা আমাকে এবং আমার মতো আরো অসংখ্য মানুষকে রোমাঞ্চ ও আবেগে অভিভূত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাইরের যে চাঁদ, তাকে নিয়ে এসেছে মাটির পৃথিবীতে। এই শতক শেষ হওয়ার আগেই তারা যাত্রা করবে মঙ্গল গ্রহের দিকে। সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে আবারো অভিভূত করবে। আমেরিকা আমি পছন্দ করি না। তবু চন্দ্রশিলায় হাত রেখে মনে মনে বললাম- তোমার জয় হোক।
এসব আলোচনা যখন চলছে তখন মার্কিনিদের নিয়ে বাংলাভাষার অন্যতম জনপ্রিয় লেখক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের একটি চমকপ্রদ লেখা নজরে এসেছে। দুই যুগেরও বেশি সময় আগে প্রকাশিত তার বই মে ফ্লাওয়ার-এ তিনি পরিষ্কার লিখে গেছেন, আমরা আমাদের দেশে একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের কথা চিন্তা করতে পারি। ভাবতে পারি। ওরা তা পারে না। আসছে একশ’ বছরেও এই আমেরিকায় কোনো মহিলা প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হবে না। অতি সুসভ্য এই দেশ তা হতে দিবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে লেখকদের একটি সম্মিলনে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতার নানা বয়ান এসেছে এ বইয়ে। প্রাসঙ্গিকভাবে তিনি লিখেছেন অন্যান্য বিষয়ও। ওই বইতে হুমায়ূন আহমেদ আরো লিখেছেন, একটি আমেরিকান পরিবারের জীবনচর্চা চিন্তা করলেই কষ্ট হয়। ওরা কি হারাচ্ছে তা বুঝতে পারে না। আমরা যারা বাইরে থেকে আসি বোঝাতে পারি কিংবা বোঝার চেষ্টা করি।
আমি আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় যা বুঝেছি তা হলো, এদের সবার চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ। বস্তুকেন্দ্রিক। একটি মেয়ের জীবনের সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষা হলো চিয়ার লিডার হবে। ফুটবল খেলার মাঠে স্কাট উঁচিয়ে নাচবে। স্কাটের নিচে তার সুগঠিত পদযুগল দেখে দর্শকরা বিমোহিত হবে। এই তার সবচেয়ে বড় চাওয়া। একটি ছেলে চাইবে মিলিওনিয়ার হতে।
এই অতি সভ্য (?) দেশে আমি দেখি মেয়েদের কোনো সম্মান নেই। একজন মহিলাকে তারা দেখবে একজন উইম্যান হিসেবেই। একটি মেয়ের যে মাতৃরূপ আছে, যা আমরা সব সময় দেখি, ওরা তা দেখে না। একটি মেয়ে যতদিন পর্যন্ত শারীরিকভাবে আকর্ষণীয়, ততদিন পর্যন্তই তার কদর।
যা কিছু হাস্যকর, তার সবই এদের ভাষায় মেয়েলি, এফিমিনেট। শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য, এই দেশে মেয়েরা একই যোগ্যতায় একই চাকরিতে পুরুষের চেয়ে কম বেতন পান। বিমানের ক্যাপ্টেন যদি মহিলা হন তাহলে বিমানের যাত্রীদের তা জানানো হয় না। ক্যাপ্টেন পুরুষ হলে তবেই শুধু বলা হয়- আমি অমুক, তোমাদের বিমানের ক্যাপ্টেন। মহিলা ক্যাপ্টেনের কথা বলা হয় না। কারণ, মহিলা বিমানের দায়িত্বে আছেন জানলেই যাত্রীরা বেঁকে বসতে পারেন। আমাদের দেশে মেয়েদের অবস্থা খারাপ, তবু একজন মহিলা ডাক্তার একজন পুরুষ ডাক্তারের মতোই বেতন পান। কম পান না।
জাতির শরীর যেমন আছে আত্মাও আছে। এই দেশের শরীরের গঠন চমৎকার কিন্তু আত্মা। এর আত্মা কোথায়?
হুমায়ূন আহমেদ ওই বইয়ে আরো লিখেছেন, আমেরিকানরা খুব জরিপের ভক্ত। সব কিছুরই জরিপ হয়ে যাচ্ছে। জরিপ চালাচ্ছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। টাকার বিনিময়ে তারা জরিপ করে দেবে। হেন বিষয় নেই যার ওপর তারা জরিপ করেনি।
সবার ধারণা আমেরিকানরা খুব বকবক করে। এই ধারণা হয়েছে আমেরিকান টুরিস্টদের দেখে। টুরিস্টরা সত্যি সত্যি বকবক করে। এরা বাড়ি থেকে বের হয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে ‘ফান’ করার জন্যে। এই বকবকানি সম্ভবত ফানের অংশ। ওদের নিজ ভূমিতে ওরা মুখবন্ধ জাতি। অন্তত আমার তা-ই মনে হয়েছে। অপ্রয়োজনে কোনো কথা বলবে না। বেশিরভাগের কথাবার্তাই ‘আজকের আবহাওয়া অসাধারণ’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তর্ক করতে এরা তেমন পছন্দ করে না। কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ যদি কথা বন্ধ করে দেয় তাহলে বুঝতে হবে ওরা এই মত সমর্থন করছে না।
বইয়ের অন্য এক বর্ণনায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, আমি এবং গুলতেকিন চাঁদের পাথরে হাত রাখলাম। আমার রোমাঞ্চ বোধ হলো। গভীর আবেগে চোখে পানি এসে গেল। কত না পূর্ণিমার রাত মুগ্ধ চোখে এই চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিস্ময় ও আবেগে অভিভূত হয়েছি। সেই চাঁদ আজ স্পর্শ করলাম। আমার এই মানব জীবন ধন্য।
আমেরিকার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাবোধে মন দ্রবীভূত হলো। আমেরিকানদের অনেক দোষ-ত্রুটি, তবু তো এরা আমাকে এবং আমার মতো আরো অসংখ্য মানুষকে রোমাঞ্চ ও আবেগে অভিভূত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাইরের যে চাঁদ, তাকে নিয়ে এসেছে মাটির পৃথিবীতে। এই শতক শেষ হওয়ার আগেই তারা যাত্রা করবে মঙ্গল গ্রহের দিকে। সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে আবারো অভিভূত করবে। আমেরিকা আমি পছন্দ করি না। তবু চন্দ্রশিলায় হাত রেখে মনে মনে বললাম- তোমার জয় হোক।