নির্বাচন কমিশন কোথায়!

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

37293_f2

 

ম্যা  থিউ এস. পেটারসনকে চেনেন? এমন প্রশ্নে যে কোনো বাংলাদেশির কাছ থেকে জবাব হিসেবে পাল্টা প্রশ্ন আসতে পারে, সে আবার কে? হ্যাঁ, তাই তো! নিজ দেশের ৯৯ ভাগেরও বেশি মানুষ যাকে চেনেন না, যার সম্পর্কে জানেন না, সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে বাংলাদেশের মানুষ তাকে চিনবেন কী করে? কিন্তু বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই নিশ্চয়ই কাজী রকিবউদ্দিনকে চেনেন। এমনকি পেছনের দিকে তাকিয়ে এটিএম শামসুল হুদা, বিচারপতি এমএ আজিজ, এম এ সাঈদ, আবু হেনা, বিচারপতি সাদেক কিংবা আবদুর রউফদের চেহারা মনে করতেও বেশি সময় লাগবে না তাদের। কিন্তু ম্যাথিউ এস. পেটারসন সত্যিই তার দেশে বড্ড অচেনা। আমজনতা তো বটেই, রাজনীতিক কিংবা সাংবাদিকদের মধ্যেও তার তেমন পরিচিতি নেই। অথচ এই ভদ্রলোকই কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
মজার ব্যাপার হলো, যুক্তরাষ্ট্রে যে একটি ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্ব রয়েছে সেই তথ্যই জানা নেই এমনকি সচেতন জনগোষ্ঠী বলে পরিচিত বহু মানুষেরও। নিউ ইয়র্ক ফেডারেল কোর্টের এটর্নি এন্ড্রু এল জনস্টোন তাদেরই একজন। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে রীতিমতো গ্যারান্টি দিয়ে তিনি জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ফেডারেল নির্বাচন কমিশন নেই। বিভিন্ন স্টেটের নির্বাচন অফিসগুলোর মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনসহ সব রকম নির্বাচনী প্রক্রিয়া। ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে তার কথার আংশিক সত্যতা মিলে যায়। সাড়ে ৩২ কোটি মানুষের দেশটিতে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনসহ যাবতীয় নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়ে থাকে মূলত স্টেট বা অঙ্গরাজ্যসমূহের নিজস্ব নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে। তবে অল্পস্বল্প কাজের জন্য হলেও ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক একটি ফেডারেল নির্বাচন কমিশনেরও অস্তিত্ব আছে। ম্যাথিউ এস. পেটারসন সেই কমিশনের চেয়ারম্যান। ভাইস চেয়ারম্যানের নাম স্টিভেন টি. ওয়ালথার। এছাড়া কমিশনার আছেন চারজন। মজার ব্যাপার হলো, ৬ সদস্যবিশিষ্ট এই ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থক হতে বাধা নেই। তবে ৬ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ জন একই দলের সমর্থক হতে পারবেন।
এই যে আর মাত্র ১৩ দিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন, সেটাকে ঘিরে ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের কোনো তোড়জোড় কারো চোখে পড়ে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেমন নেই কোনো মিটিং-সিটিং, তেমনি নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে বৈঠকের কোনো খবরও নেই। এমনকি কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রেস ব্রিফিং বা মিডিয়ার সঙ্গে কমিশন সদস্যদের সাক্ষাৎকার প্রদানের ঘটনাও এখানে অপ্রাসঙ্গিক একটি ব্যাপার বটে। কাজ হয়তো কিছু তারা করছেন, তবে সেটা নীরবেই।
নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, কানেকটিকাট ও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলো জানা গেল, মার্কিন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও সমন্বয় প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণাও নেই অধিকাংশ ভোটারের। এ ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহও লক্ষ্য করা যায়নি তাদের মধ্যে। তারা কেবল নির্বাচনের দিন নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেয়ার ব্যাপারটি নিয়েই ভাবতে আগ্রহী। এর বেশি নয়। অবশ্য নির্ধারিত নিয়মে অনেকেই আগাম ভোটও দিচ্ছেন।
ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হলো প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ সদস্যদের নির্বাচনী ফল চূড়ান্তভাবে সমন্বয় ও তা প্রকাশ করা। এর বাইরে সারা দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে কোথায় কিভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে ব্যাপারে নাক গলানোর কোনো এখতিয়ার কেন্দ্রীয় এই কমিশনের নেই। অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোট গ্রহণসহ যাবতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে রাজ্যের নিজস্ব নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে স্থানীয় আইনের অধীন। রাজ্যভেদে নির্বাচন অফিসের নামের যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি বিস্তর ফারাক আছে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনী আইন এবং নিয়ম-কানুুনেও। নিউ ইয়র্ক রাজ্যের নির্বাচন অফিসের নাম যেমন ‘বোর্ড অফ ইলেকশন ’। আবার পাশের রাজ্য নিউ জার্সিতেই এ অফিসের নাম ‘ইলেকশন ল এনফোর্সমেন্ট কমিশন’। নামে কিংবা আইন-কানুনে পার্থক্য বা অমিল যাই থাকুক না কেন, কার্যক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং ভারসাম্য রক্ষার প্রশ্নে প্রত্যেক রাজ্যের নির্বাচন অফিসগুলো নিজ নিজ স্বাতন্ত্র বজায় রেখেই সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে। সে কারণে ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো বিতর্কিত ও ব্যাপক সমালোচিত প্রার্থী যখন নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কার কথা বলেন, দেশটির রিপাবলিকান-ডেমোক্রেট নির্বিশেষে সকলেই একযোগে সেটার নিন্দা জানান, উষ্মা প্রকাশ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *