৭১ স্প্রিন্টার অপারেশনে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন ঢালী মৃত্যুর অপেক্ষায়

Slider জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ

 

img_20161002_144011

গাজীপুর অফিস; পাক হানাদারদের সঙ্গে যুদ্ধ করে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন ঢালী। বাম পায়ের হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত অস্বাভাবিক দেহের ওই অংশের প্রায়ই চিকিৎসা করতে হত।  ৭০ বছরের এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার অবস্থা এখন শংকটাপন্ন। টাকার অভাবে তিনি অপারেশন করাতে পারছেন না। তাই হাসপাতালের বেডে শুইয়ে স্বইচ্ছায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

রোববার রাতে  শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হল এই বীরমুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। কান্না ভরা কন্ঠে তিনি জানালেন তার অক্ষমতার কথা। নিজের ইচ্ছায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতির কথা।

সামছুদ্দিন ঢালীর বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়াসাঙ্গুর গ্রামে। তার স্ত্রীও ৪ মেয়ে।  কোন ছেলে সন্তান নেই।

সামছুদ্দিন ঢালী জানালেন, ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে স্থানীয় সাতখামাইর রেলষ্টেশনে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। ষ্টেশনে পাকহানাদার বাহিনীর অবস্থান জানতে পেরে সামছুদ্দিন ঢালীরা ষ্টেশনে আক্রমন করেন। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়।এক পর্যায়ে গ্রেনেড হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। তবে ওই অপারেশনে ১১ পাক সৈন্য আটক হয়।

ওই ঘটনার পর দেশ স্বাধীন হয়েছে। সামছুদ্দিন ঢালী মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছেন। সকল ধরণের সূযোগ সুবিধাও পাচ্ছেন। কিন্তু গ্রেনেডে আহত হওয়ার হাত থেকে মুক্তি পাননি টাকার অভাবে।তবু মাথায় লাল সবুজের পতাকা মুড়িয়ে কাটাচ্ছেন দীর্ঘ সময়।

তিনি জানান, গত বিএনপি সরকারের আমলে স্থানীয় একটি চক্র তার এক টুকরো ভিটেমাটি জবর দখল করার জন্য তার পরিবারের উপর হামলা করে তিন মেয়েকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। দুঃখ প্রকাশ করে সামছুদ্দিন ঢালী বলেন, আগের ওই চক্রটি আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও তার পরিবারের উপর হামলা করে সকল সদস্যকে পঙ্গু করে দেয়। তার এক মেয়ে বর্তমানে পঙ্গূত্ব বরণ করছেন। আরেক মেয়ে অর্ধেক পঙ্গু হয়ে আছেন। স্ত্রীও চলাফেরা করতে অক্ষম।

তিনি আরো জানান,  দ্বিতীয় হামলার পর ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আহত মেয়েদের দেখতে গিয়েছিলেন।  প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের চিকিৎৎসার জন্য সাহায্যও করেছেন বলে জানান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন ঢালী। মেয়েদের পঙ্গুত্ব দেখতে দেখতে সামছুুদ্দিন ঢালী নিজের চিকিৎসার কোন খবর নিতে পারেননি।  এই ফাঁকে ৭১ এর  গ্রেনেডের স্প্রিন্টার তার পায়ের রগ গুলিকে পঁচন ধরিয়ে দিয়েছে। বার্ধক্যে উপনীত এই মুক্তিযোদ্ধার শরীরের একটি অংশে পঁচন ধরায় তিনি শয্যাশায়ী হয়ে যান।

সম্প্রতি সামছুদ্দিন ঢালীর শরীরের অবস্থার অবনতি হয়। তাকে গাজীপুর শহীl তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তাররা বলছেন, গ্রেনেড হামলার ক্ষতস্থানে সকল রগে পচন ধরে গেছে। দ্রুত অপারেশন না করলে তিনি মারা যাবেন।

সামছুদ্দিন ঢালী বলেন, বারবার আমার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার কারণে আমি চিকিৎসা করতে করতে নিঃশেষ হয়ে গেছি। এখন আমার অপারেশন করার জন্য কোন টাকা নেই। তাই মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় সামনে দেখছি না।

তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেছেন, সাহায্য চাইলে মানুষ খারাপ মনে করে। না চাইলে পাওয়াও যায় না। তাই জীবনের শেষ বেলায় আর অপমানিত হতে চাই না।

টাকার অভাবে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যু পথযাত্রী যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন ঢালীর শেষ আহবান, আল্লাহ বাংলাদেশকে ভাল রাখুক, সুন্দর রাখুক। সকল মানুষ ভাল থাকুক। বাংলাদেশ চিরজীবী হউক, এই প্রার্থনা করতে করতে যেন মরতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *