মধ্যবিত্তের নাগালে ইলিশ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য গ্রাম বাংলা সারাদেশ

32649_ilish

 

ঢাকা; ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ প্রবাদ বাক্যটি অনেকেই ভুলতে বসেছিল। কেননা খাবারের তালিকায় ইলিশ মাছ সম্প্রতি দুর্লভ হয়ে উঠেছিল। চড়া দামের কারণে এই মাছ মধ্যবিত্তের নাগালের অনেকটা বাইরে চলে গিয়েছিল। তবে ঢাকার বাজারে ইলিশের প্রচুর সরবরাহ ও তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় খাবারের পাত থেকে অনেকটা হারিয়ে যাওয়া মাছটি আবার ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছের দোকানগুলোর মধ্যে ইলিশের মাছের দোকানেই বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ইলিশের দাম ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা আগে একটা ইলিশ মাছের দাম ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। বিক্রি বেশি হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও। এছাড়া ইলিশ কিনে অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতেও পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা। এত সস্তার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষার জন্য বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্‌্েরডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসে ইলিশের দাম কমছে ২৭.৭৮ শতাংশ। এ সময় প্রতি কেজি দাম ছিল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। প্রতিষ্ঠনাটির বতর্মান হিসাবে ৫০০ টাকার নিচে চলে এসেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাওরান বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম একটু বেশি দেখা গেছে। এক থেকে দেড় কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তবে এক কেজি বা এর নিচে প্রতিটি ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এছাড়া ২০০ টাকায়ও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে রুই ,কাতল, পাঙ্গাশসহ নানা ধরনের মাছ থাকলেও সেদিকে ক্রেতাদের নজর যাচ্ছে খুবই কম। বেশিরভাগ ক্রেতার দৃষ্টি ইলিশ মাছের দিকে। আর ভিড়ও লেগে আছে দোকানগুলোতে।
রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ইলিশের দাম ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা আগে একটা ইলিশ মাছের দাম ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। অনেকে একসঙ্গে কয়েক হালি ইলিশ মাছ কিনছেন। কম দামের কারণে এভাবে ইলিশ মাছ কিনছেন ক্রেতারা।
তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা সাব্বির আলম বলেন, কিছু দিন আগেও একটা ইলিশ মাছের দাম ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এখন তো এক হালিই ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। যা কোনদিন এত সস্তা ছিল না।
পোশাক কারখানায় কাজ করেন আকলিমা খাতুন। সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে কারওয়ানবাজার পাইকারি মাছের আড়তের বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। কারওয়ানবাজার থেকে এফডিসিগামী রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। মানুষের ভিড় থাকায় খাদিজা সামনে এগোতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে মেয়েকে সিএনজি গ্যাস পাম্পের সামনে দাঁড় করিয়ে এক ইলিশ বিক্রেতার সামনে দাঁড়ালেন। আফা মাছ নিবেন নাকি? পানির দামে ইলিশ মাছ। খুবই সস্তা। হালি মাত্র ১২০০ টাকা। পরে দরদাম করে ৮০০ টাকা হালি হিসেবে ২০০ টাকায় একটি ইলিশ কিনে মেয়ের কাছে আসলেন। ইলিশ দেখে মেয়ের মুখে হাসি।
মাছ বিক্রেতা জানান, ইলিশের দাম এতটা নেমে আসবে সেটি তিনি ভাবতেও পারেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে এর দামও কমে এসেছে। এ ছাড়া মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষার জন্য বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
জানা গেছে, মা ইলিশ যাতে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রায় তিন সপ্তাহ দেশের সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এ জায়গাগুলো হচ্ছে, ভোলার তজুমুদ্দিন, চট্টগ্রামের গণ্ডামারা, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এবং পটুয়াখালীর কিছু এলাকা। এ ছাড়া ডিম ছাড়ার পর সে ইলিশ যাতে বড় হতে পারে সেজন্য প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে দেশের ৫টি এলাকায় জাটকা বা ছোট ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে জায়গাগুলোতে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সেগুলো হচ্ছে- লক্ষ্মীপুর, ভোলা, নোয়াখালী, চাঁদপুর এবং পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, মৌসুমের শুরুতে ইলিশ ধরা না পড়লেও মৌসুমের শেষের দিকে চাঁদপুরের নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। গত দুতিন মাস ধরে চাঁদপুর মাছঘাট ছিল ইলিশশূন্য কিন্তু এখন তার বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিদিন চাঁদপুরে আমদানি হচ্ছে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরো আড়ৎজুড়ে ইলিশ আর ইলিশ। দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম মণপ্রতি ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা। যা কেজি হিসেবে মূল্য ৮শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। ৭শ’ গ্রাম থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ১৮ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা যা কেজি প্রতি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। এছাড়া ৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রামের ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। যা প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া মানবজমিনকে জানান, গত ৪ থেকে ৫ দিন ধরে চাঁদপুরের মাছঘাটে ভরপুর মাছ আসতে শুরু করেছে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, ভাদ্র মাস থেকেই ইলিশের আহরণ বৃদ্ধি পায়। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস ইলিশের ভর মৌসুম। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, চান্দ্র মাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে প্রতি বছর আশ্বিনী প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন। বড় পূর্ণিমা আগামী ১৬ই অক্টোবর এ পূর্ণিমার ৪ দিন পূর্বে  ১২ই অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়। আগে ৪ দিন ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২  দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে। এই কর্মকর্তা জানান, দেখা গেছে নিষিদ্ধের সময় পার হওয়ার পরও মা ইলিশ মাছ সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার সময় ধরা পড়ছে। এজন্য গত বছর থেকে ইলিশ ধরার নিষিদ্ধের সময় ১১ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়। কিন্তু এরপরও দেখা গেছে মা মাছ ধরা পড়ছে। তাই এখন সময় ২২ দিন করা হচ্ছে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, সরকারের জাটকা নিধন রোধ ও জেলেদের পুনর্বাসন কার্যক্রম এ বছর শতভাগ পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেন বরগুনা উপকুলীয় এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এর ফলে শেষ বর্ষা মৌসুমেও বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. ওয়াহেদুজ্জামান মানবজমিনকে জানান, গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম এবং ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *