ঢাকা: চাকরি শেষে সরকারি কর্মচারীরা পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নিতে পারবেন না। তবে অর্ধেক তুলতে পারবেন। বাকি অর্ধেক নিতে হবে মাসে মাসে।
সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পেনশন সংস্কারবিষয়ক এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, এ আর এম নজমুস সাকিব প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পেনশন নিয়ে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন একটি রূপরেখা করা হবে। তবে বেসরকারি খাতে পেনশন চালুর বিষয়ে কোনো কিছু করতে আরও দুই বছর সময় লাগবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আপাতত বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন পেনশন-ব্যবস্থা চালুর পক্ষে সরকার।
এবারের বাজেট বক্তব্যে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, পেনশন-ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের কথা ভাবছেন তিনি এবং দেশে একটি সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা চালু করতে চাইছেন। বাজেট বক্তব্যে দেশের বেসরকারি জনগোষ্ঠীকেও পেনশনের আওতায় নিয়ে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থ বিভাগের ধারণাপত্রে বিদ্যমান পেনশন-ব্যবস্থা সংস্কারের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে জনমিতিক কাঠামোর পরিবর্তন, গড় আয়ু ও গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের হার বৃদ্ধি, পারিবারিক কাঠামোর পরিবর্তন, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অসহনীয়তা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
বিদ্যমান পেনশন-ব্যবস্থার কিছু অসুবিধার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, বিষয়টি বাজেটের ওপর চাপ তৈরি করে এবং এই চাপ দিনে দিনে বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বিদ্যমান পেনশন-ব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বেসরকারি আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত কর্মজীবীদের অসুবিধার কথাও ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এ ব্যাপারে সরকারের নজরদারি, ব্যবস্থাপনা ও আইন নেই। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব মূলধনে সঞ্চিত অর্থ ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে গেলে সঞ্চয় ফেরতের কোনো সুযোগ থাকে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁরাই পেনশন-সুবিধা পাচ্ছেন। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত, অর্থাৎ চাকরি-বাকরি করছেন এমন ৮ শতাংশ শুধু গ্র্যাচুইটি-সুবিধা পান। অন্যদের জন্য পেনশন-গ্র্যাচুইটি কিছুই নেই।
পেনশন-ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে গেলে গণকর্মচারী (অবসর) আইন, ১৯৭৪ এবং এ বিষয়ে যে বিধি রয়েছে, তা সংশোধন করতে হবে এবং একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে—এসব কথাও ধারণাপত্রে তুলে ধরা হয়। এতে আরও বলা হয়, পেনশন-ব্যবস্থায় সংস্কার আনার পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের জন্য দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মৃত্যু ইত্যাদি বিমা পলিসিও চালু করা যেতে পারে।
পেনশন নিয়ে এবারের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, নগরায়ণের কারণে দেশে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য বাড়ছে আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকি। সরকারের একার পক্ষে এ ঝুঁকি মোকাবিলা করা দুরূহ। তাই দেশের সব শ্রমজীবী মানুষসহ প্রবীণদের জন্য একটি সর্বজনীন ও টেকসই পেনশন পদ্ধতি চালু এখন সময়ের দাবি।
জানা গেছে, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ আর এম নজমুস সাকিবের তত্ত্বাবধানে ধারণাপত্রটি তৈরি করেছেন মূলত অর্থ বিভাগের একজন উপসচিব এবং একই বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব। অর্থ বিভাগ এখন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য একটি সার-সংক্ষেপ তৈরি করবে।