ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্থ হবে না যখন পর্যন্ত না রাষ্ট্রপক্ষ হস্তক্ষেপ করে। সাম্প্রতিক সময়ে দু্টি আলোচিত হত্যাকান্ড দেশবাসীকে অবাক করে দিয়েছে। নৃশংস হত্যাকান্ডের মামলায় পুলিশি তদন্ত যে এত ন্যাক্কার জনক ভাবে প্রভাবিত হয় তার নজির স্থপিত হয়ে গেছে। স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে সামাজিক আন্দোলনের মুখে যে তদন্ত আরো বেশী প্রভাবিত হয় এই দুটি ঘটনা তার উজ্জ্বল উদারহরণ।
জানা যায়, কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার ময়না তদন্ত রিপোর্ট এক এক সময় এক এক রকম আসে। শেষ রিপোর্টটি উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়ে বের করলেও ধর্ষন নয় ইচ্ছাকৃত সহবাস বলে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে। যদি তনু ইচ্ছাকৃত ভাবে অসামাজিক কাজ করে থাকেন তবে খুনও হয়েছেন ইচ্ছাকৃত ভাবেই! মরে গিয়ে নিজ দেহকে রক্তাক্ত করেছেন ভুত ডেকে এনে? মিথ্যাচারের একটি সীমানা থাকে। রাষ্ট্র এমন জঘন্য মিথ্যাচার করে এটা আগের অভিজ্ঞতায় বলে না।
এদিকে চট্রগ্রামের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তও ক্রসফায়ার হয়ে গেল। একটু আগের খবরে বুঝা গেল মিতু হত্যার তদন্ত খুন হয়ে গেছে। মামলার মূল আসামীদের কেউ ক্রসফায়ার হলে আর মামলার প্রকৃত সত্য বের হয়না। তদন্তে ভুল হয়। আর ভুল তদন্তে বিচার হলে তাতো ভুল হবেই। এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত নবী হোসেন ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছেন। নবী হোসেনের ভাই শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে নবী হোসেনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন। আর পুলিশ নবী হোসেনকে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ সকালে ক্রসফায়ারে নবী হোসেন সহ দুই আসামী মারা গেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে পুলিশ নবী হোসেনকে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে আজো বলেছে, মিতু হত্যা মামলার আসামীরা গোপন বৈঠক করছে বলে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়। পরে ক্রসফায়ারে নবী সহ দুুই জন মারা যায়।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মিতু হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামী মুসা ও নবী হোসেন। এই দুই আসামীর পরিবার বলছে, তাদের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আর পুলিশ বলছে ধরে নি। তবে আজ নবী হোসেন ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছে একই কায়দায় মুসারও মৃত্যু হতে পারে। যদি মুসা ও নবীর ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয় তবে মিতু হত্যা মামলায় আর হুমুক দাতা কে, কোন দিন তা আলোতে আসবে না। যে সকল আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী দিয়েছেন তাদের অপরাধের সাজা হবে। আর জাতি দেখবে মিতু হত্যা মামলায় কঠিন শাস্তি ।
এই দুটি হত্যা মামলায় এসপি কিংবা সেনাবাহিনীর কেউ অভিযুক্ত হয়ে থাকলে ক্ষতির কি ছিল। নারায়নগঞ্জের সাত খুন মামলায় যদি সেনা কর্মকর্তা গ্রেফতার হতে পারেন তবে তনুর ক্ষেত্রে সিপাহী গ্রেফতার হলে কি ক্ষতি ছিল? এতে কি সেনাবাহিনীর ইজ্জত চলে যেত? যদি ওরা কেউ অপরাধী না হত তবে বিচারের মাধ্যমে আবার চাকুরীতে ফিরে আসতেন। আর বাবুল আক্তার নির্দোষ হলে তিনিও বিচারের পর খালাস পেয়ে চাকুরীতে ফিরতেন। যেহেতু বর্তমানে পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়ে রিমান্ড শেষে জামিন পায়। মামলা চলাকালীন সময়ে আবার চাকুরীতে যোগদানও করেন। তাহলে এসপি বাবুল আক্তারের ক্ষেত্রে এমন হলে ক্ষতি কি ছিল? এছাড়া এই দুটি মামলা তো রাজনৈতিক ছিল না। তাহলে আমরা তদন্ত ক্রসফায়ার দিচ্ছি কেন?
আমাদের দেশে ক্ষুদ্র স্বার্থ রক্ষার জন্য বৃহত্তর স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার অতীত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বহমান। আমরা যতবার যতবেশী স্বার্থবাদী হয়েছি তত বেশী বিপদে পড়েছি। আমরা বিপদে পড়ে শ্রষ্টার নাম উচ্চারণ করি বেশী বেশী করে। বিপদ উদ্ধার হয়ে গেলে আর শ্রষ্টার নাম মনে থাকে না। কিন্তু বিপদে যে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যায় তার বিন্দুমাত্রও প্রতিক্রিয়া আমাদের মধ্যে থাকে না। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় নৈতিক স্খলন।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত তনু ও মিতু হত্যা মামলা দুটির তদন্ত ক্রসফায়ার হয়ে যাওয়ায় ন্যায় বিচার মরে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই জাতির পক্ষে ওই দুই নারীর নিকট ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। তাই সরি তনু। ক্ষমা চাই মিতু। তোমাদের তদন্তই ক্রসফায়ার হয়ে গেছে। তাই সঠিক বিচার দিতে পারলাম না আমরা।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম