যত রহস্য তিন মোবাইলে

Slider জাতীয়

 

untitled-4_221983

 

 

 

 

 

তিনজনের মোবাইল ফোনে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার রহস্য লুকিয়ে আছে। খুনের নির্দেশদাতা কামরুল ইসলাম মুছা ওরফে মুছা সিকদার হলেও মূল পরিকল্পনায় কে ছিলেন সে বিষয়ে তথ্য রয়েছে তার মোবাইল ফোনে। আবার স্কুল কর্তৃপক্ষের নামে আসা রহস্যজনক খুদেবার্তার তথ্য রয়েছে মিতুর মোবাইল ফোনে। গভীর রাতে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর যাকে ঘিরে এ সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, সেই বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনেও মিলতে পারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, মিতু হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে কার কার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল তা নিশ্চিত করবে বাবুল আক্তারের কললিস্ট। এর মধ্যে দুই থেকে তিন মাস আগে তার সঙ্গে মুছা সিকদারের ফোনে কথা হওয়ার তথ্য মিলেছে। আরেকটি সূত্র বলছে, মিতু হত্যার পরও বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনে ফোন দেন মুছা। হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত মিতুর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মুছা গ্রেফতার রয়েছে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করলেও তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেননি। উল্টো মুছাসহ পাঁচজনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে যা যা করা দরকার তার সবই করছি আমরা। মোবাইল ফোনের কললিস্টও আমাদের পর্যালোচনায় আছে।’

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, মিতু হত্যার মাস দুই-তিনেক আগে বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনে কল এসেছিল মুছার। এ সময় তিনি বাবুল আক্তারের বদলি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। আবার হত্যাকাণ্ডের পরেও বাবুল আক্তারের ফোনে মুছার কল আসে বলে জানান তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। মাস দুই-তিনেক আগে মুছার সঙ্গে বাবুল আক্তারের কথা হওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছে বাবুল আক্তারের পারিবারিক সূত্র। তবে হত্যাকাণ্ডের পরে মুছার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে তারা দাবি করছে। হত্যাকাণ্ডের পরে বাবুলের মোবাইল ফোনটি ছিল তার আত্মীয়দের হাতে। সেখানে কোনো কল এসেছে কি-না কিংবা স্বজনদের কেউ মুছার সঙ্গে কথা বলেছে কি-না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ওই সূত্র।

বাবুলের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের পরও বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনে ফোন দিতে পারেন মুছা। বাবুলের নম্বর ক্লোন করেও এ হত্যাকাণ্ডে তাকে জড়াতে পারে অপরাধীরা।

মিতুর মোবাইল ফোন নিয়ে লুকোচুরি :খুন হওয়ার আগের রাতে মিতুর মোবাইল ফোনে ছেলের স্কুল কর্তৃপক্ষের নামে একটি খুদেবার্তা আসে। হত্যার পর বিষয়টি জানিয়েছিলেন মিতুর সঙ্গে একই ভবনে বসবাসকারী প্রতিবেশীরা। কিন্তু খুদেবার্তার বিষয়টি প্রথমে খতিয়ে দেখার কথা বলা হলেও পরে বিষয়টি এড়িয়ে যায় তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। মিতুর মোবাইল ফোন উদ্ধার নিয়েও পুলিশ লুকোচুরি করছে। একটি সূত্র বলছে, মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়েছে, তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি।

গুরুত্বপূর্ণ মুছার কললিস্ট :মিতু হত্যায় গ্রেফতার আনোয়ার ও ওয়াসিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে মুছার নাম উল্লেখ করেন। তাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডে সাত থেকে আটজনের দল অংশ নেয়। এরই মধ্যে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুছার কললিস্ট পর্যালোচনা করলে বাকিদের বিষয়ে তথ্য মিলবে। খুনের মূল পরিকল্পনায় কে ছিলেন সে বিষয়েও জানা যাবে।

উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুনিরা :মিতু হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তরা তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে খুবই সতর্ক ও শক্তিশালী। মিতুর মোবাইল ফোনে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই খুদেবার্তা পাঠানো হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই কোন উৎস থেকে খুদেবার্তা এসেছিল তা নিশ্চিত করতে পারেননি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। তবে খুনিরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, তা সাধারণত জঙ্গি কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই ব্যবহার করে বলে জানায় পুলিশেরই একটি সূত্র।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘মিতুর ফোনে খুদেবার্তার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুদেবার্তা পাঠানো যায়। সিমও ক্লোন করা যায়। তবে এ রকম হলেও আমরা বিষয়টি শনাক্ত করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *