স্মৃতির পাতায় বেঁচে থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সরকার

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় বাধ ভাঙ্গা মত

13576487_1659151601076461_595656565_n

 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর অফিস;  জীবন বাজী রেখে ১৯৭১ সনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন যারা তাদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সরকার। অগ্নিঝরা ১৯৭১ সনের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের মতই মান্নান সরকার হাতে মুক্তিযুদ্ধের পতাকা নিয়ে লাল সবুজের পতাকার জন্য প্রাণ দিতে ঘর ছেড়ে ছিলেন তিনি। কাপাসিয়ার সন্তান জাতীয় চার নেতার অন্যতম বাংলাদেশর প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীর আহমেদের ঘনিষ্ট একজন ছিলেন  মান্নান সরকার।

গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের মরহুম ইব্রাহিম সরকারের ছেলে আব্দুল মান্নান সরকার। ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন তিনি। ৭০ বছর বয়সে গত মে মাসের ২১ তারিখ পরলোক গমন করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও ৬ সন্তান রেখে গেছেন। ৫ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সকলেই দাম্পত্য জীবনে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। এই পরবারের একটিই মাত্র কষ্ট  অভিভাবক হারালেন তারা।

মান্নান সরকার মৃত্যুকে আগাম বরণ করে গিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে দেখিয়েছেন কৃতিত্ব। ১৯৭১ সনে ২৫ বছরের টগবগে  যুবক মান্নান সরকার জীবন যৌবন বিসর্জনের অঙ্গীকার করে যুদ্ধ করেছেন। পরিশ্রম কে পরিশ্রম মনে করেননি। মান্নান সরকার  সকল পরিশ্রম ভয় ও মৃত্যুর পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ছুটে চলেছিলেন হানাদার বাহিনীকে ধ্বংস করতে। যৌবনের উত্তাপ তাকে পিছু হটাতে দেয়নি। বীরদর্পে প্রাণপন যুদ্ধ করে একটি অখন্ড দেশের জন্ম দিয়ে গেছেন তিনি। তখন একটিই দৃঢ় প্রত্যয় ছিল জীবনের বিনিময়ে হলেও জাতীয় পতাকা ছিনিয়ে আনবেন। প্রতিষ্ঠা করবেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। অবশেষে মান্নান সরকাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।  মান্নান সরকারদের সীমাহী ত্যাগ ও  ভাষাহীন বিসর্জনে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। একটি লাল সবুজের পতাকা।

একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি। এই গানটি ছিল মান্নান সরকারদের উদ্যম ও জীবনী শক্তি সঞ্চয়ের একটি অনুপ্রেরণা। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পর চলতি বছরের ২১ মে রাত ৩টায় পরলোকে চলে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সরকার। মৃত্যুর আগে তার পরিবার চিকিৎসা করেছেন সর্ব শক্তি দিয়ে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই চলে যেতে হয়েছে তাকে। একজন জতীয় বীরের মৃত্যুতে আমরা  গভীর শোক প্রকাশ করি। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। এটাই নিয়ম। কিন্তু এমন কোন নিয়ম নেই যা পালন করলে মৃত  ব্যাক্তি আবার ফিরে আসেন। সতুরাং চলে গেছেন বীর আর ফিরে আসবেন না এই বাংলায়। প্রকৃতির নিয়ম জানা থাকলেও মান্নান সরকারের পরিবারের সদস্যরা এখনো চোখের সামনে তাদের প্রিয়মুখটি দেখতে পান। এখনো তাদের চোখে মুখে ভেসে উঠে মান্নান সরকারের অসংখ্য স্মৃতি। বাড়ির উঠানে, নদীর ঘাটে কিংবা পুুকুর পাড়ে নিজের সন্তানদের সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও পটভূমি নিয়ে কতনা গল্প আড্ডা এখন শুধুই স্মৃতি। মান্নান সরকার হয়ত ফিরে আসবেন না কোন দিন কিন্তু মান্নান সরকারের স্মৃতি বুকে ধারণ করে তার পরিবারের সদস্য মহান এই বীরকে বাঁচিয়ে রাখবেন যুগের পর যুগ। এই আশাবাদের মধ্যে সবচেয় গর্ব ও অহংকারের কথা হল একজন জাতীয় বীরের সন্তান তারা। ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধ করার সময় যদি তিনি শহীদ হতেন তবে কারো কিছু করার ছিল না। এখন তার পরিবারের একটাই সান্তনা ৭১ সনের পর মান্নান সরকার তাদের যে সময় দিয়ে যেতে পেরেছেন তা অতিরিক্ত। যা আবেগী, স্মৃতিময় ও ইতিহাসের একটি অতিরিক্ত অধ্যায়। মান্নান সরকারের বেঁচে থাকার অতিরিক্ত সময়ে তার যে প্রজন্ম রেখে গেছেন তারাই তাকে স্বরণ করবেন আজীবন। অমর করে রাখবেন তাদের স্মৃতির পাতায়। মান্নান সরকারের মৃত্যুতে দেশ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছেন এটা ঠিক তবে মান্নান সরকারদের বিয়োগ জাতির জন্য একটি বড় ধরণের ক্ষতি। এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়।

যদি আবারো দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ হয় তবে মান্নান সরকাররা হয়ত যুদ্ধ করতে পারবেন না কিন্তু তাদের নীতি আদর্শ দেশপ্রেম নতুন যুদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে নিশ্চই। মান্নান সরকাররা জাতির অহংকার। জাতির গর্ব। তাদের লাখ কোটি লাল সালাম।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *