জবাব মিলছে না অনেক প্রশ্নের

Slider জাতীয়

4664f4164817e5d989b0a5330f072a93-20

 

 পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে এখনো জবাব মিলছে না অনেক প্রশ্নের। চার দিন অতিবাহিত হলেও এখনো অন্ধকারে রয়েছেন গোয়েন্দারা। হয়নি খুনের কোনো কূলকিনারাও।
যদিও নগর গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করেছে তদন্তের স্বার্থে পাওয়া অনেক তথ্য এখনি সবার সামনে তারা জানাতে পারছেন না। অনেকটা নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল তারা এই নিয়ে মুখ খুলবেন। তবে জনমনে তৈরি হওয়া অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনেকটা হিমশিম পুলিশ কর্মকর্তারা।
বিষয়টি স্বীকার করে ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেছেন, আসামি ধরতে না পারলেও তথ্যগত দিক থেকে তারা কিছুটা এগিয়েছেন। অপরাধীদের ধরতে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ১০টি টিম।
বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের পর এখনো যেসব প্রশ্নের জবাব মিলেনি সেগুলো হলো- ঘটনার দিন হত্যার পর মিতুর কেড়ে নেয়া মোবাইল ফোনটি কোথায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩ সন্ত্রাসী কি জঙ্গি না অন্য কোনো গোষ্ঠীর     সদস্য, পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীদের বহনকারী মোটরসাইকেলটির আসল মালিক কে, হত্যাকারীরা কি একাই এসেছিল না তাদের আশপাশের অনেকে ছিল ও খুনিরা কিভাবে জানত নিহত মিতু তার সন্তানকে নিয়ে ভোরে বের হবেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, সব প্রশ্নের জবাব এখনি আমরা দেবো না। তবে তার বাসা থেকে আগে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা বিষদভাবে তদন্ত করছি। এরই মধ্যে বাবুল আক্তার আমাদের জানিয়েছেন মিতু নিয়ম অনুযায়ী ৭টায় বের হন।
তিনি বলেন, ওই ৩ জন ছাড়াও ঘটনাস্থলের আশপাশে আরও অনেকে ছিল যারা খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত-অন্তত এমনটাই আমরা এখন ধারণা করছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অপরাধীদের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এটি ৬ বার হাত বদল হয়েছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। শেষবার তা চুরি হয়। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।
মিতুর মোবাইল ফোন কোথায়?: পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যার পর তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় ৩ দুর্বৃত্ত। সেই ফোন পাওয়া গেলে সকাল বেলায় ৪০ মিনিট আগে ৫ মিনিটের গন্তব্যে যেতে কেন তিনি এত তাড়াতাড়ি বের হলেন তার জবাব মিলবে বলে ধারণা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। কারণ ঘটনার আগের দিন রাতে মিতু প্রতিবেশি এক মহিলাকে ফোন করে নিজেই জানিয়েছিলেন তার মোবাইলে বাচ্চার স্কুল থেকে এসএমএস এসেছে। সেখানে লেখা ছিল সময় পরিবর্তিত হওয়ায় অ্যাসেম্বলি তাড়াতাড়ি হবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইলটির অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তার সর্বশেষ কল লিস্ট ও টিঅ্যান্ডটি ফোনের কথোপকথনও রেকর্ড নেয়ার চেষ্টা চলছে। পুলিশ মনে করছে, মিতুর বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়ার মধ্যে হত্যার আলামত অনেক কিছু লুকিয়ে রয়েছে। সেটি নিশ্চিত হওয়া গেলে অনেকটা জানা যাবে কারা তাকে হত্যা করেছে।
আসামিদের নিয়ে অন্ধকারে: মিতুকে হত্যা করে মোটরসাইকেলে চড়ে যে ৩ যুবক পালিয়ে গেছে তারা কি জঙ্গি নাকি অন্য কোনো বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত তার জবাব মেলেনি এখনো। পুলিশ এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কারা আসলে হত্যা করেছে সাহসী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে। বারবারই তারা সন্দেহ ও অনুমানের কথা বলেছেন।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১০/১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু যাদের ধরা হয়েছে তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি তারা খুনের সঙ্গে জড়িত কিনা। খুন হওয়ার পর ৪ জনকে আটক করার পর ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর মোটরসাইকেল চালকের সন্ধানে নেমে আটক করা হয় একজনকে।
তিনি জানান, মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেট ঠিক রেখে কেউ তার নম্বর জালিয়াতি করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ তার মোটরসাইকেল তার কাছেই আছে। ভিডিও ফুটেজ শনাক্ত করে মোটরসাইকেলের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসের সম্পৃক্ততা থাকার সন্দেহে আটক করা হয় এর চালক জানে আলমকে। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখলেও অপরাধীদের সহায়তা করতে তিনি সেখানে যাননি। তার সঙ্গে আটক করা হয়েছে আরো দুইজনকে। এদের একজন শিবির নেতা আবু নসর গুন্নু। আরেকজন মনির। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও খুনের সঙ্গে জড়িত কিনা তা জানা যায়নি।
খুনিরা ছিল সংঘবদ্ধ: মিতু হত্যাকাণ্ডে ৩ জন জড়িত থাকার আলামত পাওয়া গেলেও তারা সংঘবদ্ধ ছিল বলে অনেকটা নিশ্চিত গোয়েন্দারা। কেননা দীর্ঘদিন ধরে তারা বাবুল আক্তারের জিইসি মোড়ের বাসা রেকি করছিল। তার স্ত্রী মিতু কখন আসা যাওয়া করেন সেই বিষয়টি জানার পর দুর্বৃত্তরা হত্যার পরিকল্পনা করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, একজন সন্ত্রাসী মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মিতু হত্যায় অংশ নেয়। অন্য দুইজন মোটরসাইকেলে চড়ে সেখানে উপস্থিত হয়। এরপর ৩ জন মিলে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়, সেখানে ওই ৩ জন ছাড়াও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরো বেশ কয়েকজন অপরাধী মিতুর বের হওয়ার বিষয়টি নজরে রাখছিল।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, জিইসি মোড়ের ঘটনাস্থলের আশপাশে যারা উপস্থিত ছিল সেখানকার কয়েকজনকে মোবাইল ট্র্যাকের মাধ্যমে আমরা আটক করেছি। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে নসর নামের একজনকে এরই মধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আরো কয়েকজনকে আটক করে তাদের উপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
মানববন্ধন চলাকালে ছোরাসহ আটক এক
ওদিকে চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমিকা রাখা পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুর খুনের বিচার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন চলাকালে জঙ্গি সন্দেহে এক যুবককে আটক করেছে জনতা। তার কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে দুইটি ছোরাসহ একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে।
রিকশা চালিয়ে বেশ কয়েকবার মানববন্ধনের সামনে দিয়ে ঘোরাফেরার সময় তাকে আটক করে টহল পুলিশে দেয়া হয়। আটককৃত মো. ইব্রাহিমের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তাকে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে গতকাল বিকাল তিনটার দিকে জামালখানের চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। কোতোয়ালি থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক তোজাম্মেল হক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুল প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা ওই যুবকের পিঠে ব্যাগ ছিল। রহস্যজনক আচরণ করছিলেন ওই রিকশাচালক।
এরপর স্থানীয় কয়েকজন তরুণ ওই রিকশাচালককে আটক করে টহল পুলিশে সোপর্দ করে। এই সময় ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশ কিছু না পেলেও রিকশার যাত্রী বসার গদির নিচে দুটি ছোরা, একটি পেনড্রাইভ ও একটি দামি মোবাইল পাওয়া যায়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে জঙ্গি সন্দেহে এক রিকশাচালককে আটক করা হয়েছে। তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *