সন্দেহজনক আটক অফ, রিমান্ডে নির্যাতন নীল

Slider জাতীয় বাংলার আদালত বাধ ভাঙ্গা মত সম্পাদকীয়

file

 

 

পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্ট ১৩ বছর আগে  যে রায় দিয়েছিলেন তা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর বিনা কারণে কাউকে আটক বা নির্যাতন করতে পারবে না।

আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন।

আপিলের রায়ে আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করা হলো। তবে হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনাগুলোতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিষয়গুলো জানা যাবে।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, ১. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। ২. কাউকে  গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। ৩. গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে  গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। ৪. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে। ৫. গ্র্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। ৬. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন। ৭. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ৮. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। এসব নির্দেশনা ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল হাইকোর্টের সেই রায়ে।

১৯৯৮ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রুবেল মারা যান। ওই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধন চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল ওই রিট আবেদনের রায়ে হাইকোর্ট কয়েকটি সুপারিশসহ সিআরপিসির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশ দেন। আর যতদিন আইন সংশোধন না হচ্ছে, ততদিন পুলিশকে মেনে চলার জন্য কয়েকটি অন্তবর্তী নির্দেশনা দেন।

পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় সরকার। ২০০৩ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ সরকারের আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই অন্তবর্তী নির্দেশনাগুলো আপিল বিভাগ স্থগিত করেননি। সরকারও নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করেনি। এরপর সরকার আপিল করে। ১৭ মে আপিলের শুনানি শেষ হয়। আজ রায়ের দিন ধার্য ছিল।

এদিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনা নিয়ে উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তার আলোকেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ সচিবালয়ে  নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় এলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে পুলিশ কিভাবে এবং কারা  গ্রেপ্তার করতে পারবেন। এখনো কিন্তু সেটা হচ্ছে। যে সংস্থা গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে, পোশাকে সেটা উল্লেখ থাকে।

আপিল বিভাগের রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার আ: বাতেন গনমাধ্যমকে বলেছেন, আদালতের রায়ের আলোকেই তারা কাজ করবেন।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, উচ্চ আদালতের এই ঐতিহাসিক রায়ের পর পুলিশ বা শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবেন না। তবে কি হয় তা সময়ই বলে দিবে।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *