গ্রাম বাংলা ডেস্ক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজ শাসনামলে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে না পারায় আক্ষেপ করে বলেছেন, আমার শাসনামলে একক সিদ্ধান্তে অনেক কিছু করেছি। একক সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারিনি। গণতন্ত্র মানতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা করতে পারিনি। আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। এটা করতে পারলে তার নামের পাশে আমার নাম লেখা থাকত। এখন দেশে কিসের গণতন্ত্র চলছে? গণতন্ত্র কোথাও দেখি না। গণতন্ত্র মানে সুশাসন। তাহলে কিসের গণতন্ত্র?
মঙ্গলবার সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ তার বনানীর কার্যালয়ের মিলনায়তনে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু নেতৃবৃন্দের সাথে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়ের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু এমপি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সোমনাথ দে এবং হিন্দু নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেব নাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত জে এল ভৌমিক, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জুয়েল ভৌমিক, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা চন্দ্র শেখর হালদার, নারায়ণচন্দ্র প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এসময় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আমিন শানু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব বাহাউদ্দিন বাবুল, নুরুল ইসলাম নুরু, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান আহমেদ সেলিম, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, আবু হাসান আহমেদ জুয়েল, তরুন বসু, শাহাদৎ কবির, ছাত্র সমাজের মিজানুর রহমান মিরু, ঝুটন দত্ত, রতন সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, গোটা দেশের মানুষ এখন শান্তিতে নেই। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে তাদের জীবন কাটাতে হয়। সর্বত্রই চলছে দখলদারিত্ব আর লুটপাট। এখন দেশে সুশাসন নেই। সবকিছুতেই দলীয়করণের ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে জাতীয় পার্টিকেই আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় পার্টি আবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে- মানুষের মুখে হাসি ফিরে আসবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে আসতে পারে না।
এরশাদ বলেন, আমি ছিলাম স্বৈরাচার রাষ্ট্রপতি। একক সিদ্ধান্তে কাজ করতাম। একক সিদ্ধান্ত কি খারাপ? একক সিদ্ধান্তে উপজেলা করেছি। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সাতটি বেঞ্চ করেছি। এগুলো কি স্বৈরাচারি কাজ? যদি তা হয়, তাহলে আমি স্বৈরাচার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে এরশাদ বলেন, আপনার বাবা নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আপনি এবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। তাহলে জনগণ আপনাকে মনে রাখবে। এরশাদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি স্বৈরাচার হলেও মানুষের দুঃখ বেদনা বুঝি। মানুষের কষ্টে আমার হৃদয় কাঁদে। আপনারা কখনোই নিজেদের সংখ্যালঘু বলবেন না। এই মনোভাব নিয়ে চলবেন না। আপনারাও এদেশের নাগরিক। আপনাদের আমাদের অধিকার সমান।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, আমি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জন্মষ্টমীর দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছি। অর্পিত সম্পত্তি আইন স্থগিত করেছি। হিন্দু কল্যাণ ট্রাষ্ট গঠন করেছি। সেই ট্রাষ্টের টাকায় এখনো মন্দির নির্মাণ-সংস্কার এবং দুর্গা পূজায় অনুদান দেয়া হয়। হিন্দুদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিার সুযোগের ব্যাপারে কোনো বৈষম্য করেনি। এককভাবে এসব কল্যাণমুখী কাজ করলেও আমাকে স্বৈরাচার বলা হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসনে দেশ কিভাবে চলছে- তা দেশের মানুষ টের পেয়েছে।