ডক্টর এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইন চীফ, গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
—চলছে দেশ। চলবেও। সরকার চালাবে রাষ্ট্র। একটি স্বাধীন দেশ ও সরকার কোন দিন অবৈধ হয় না। সিস্টেমে সমস্যা থাকতে পারে। বে-আইন, আইন হয়ে গেলেই সরকার বৈধ হয়ে যায়। আইনের বাইরে কোন সরকার চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ যারা রাষ্ট্রের মালিক তাদের যে কোন অপরাধ বিচারের আওতায় আসে। যারা বিচার করেন তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আর যারা বিচার পরিচালনা করেন তারাই সরকার। এখন প্রশ্ন এসে যায়, যারা বিচার ও রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তারা অপরাধ করলে বিচার নিশ্চিত হবে কি ভাবে? আমাদের বিচার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রন সরকারের হাতে। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হলেও বিচারপতি নিয়োগ সরকারের হাতেই থেকে গেছে। ওই টুকু স্বাধীন করার জন্য দাবি জোরালো থাকা অবস্থায় হিতে বিপরিত হয়ে গেছে। আম পারতে গিয়ে ডাল ভেঙ্গে গেছে। মানে হল, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাত থেকে আলাদা করতে গিয়ে বিচারপতি নিয়োগ ও বাতিলের ক্ষমতা সংসদের হাতেও চলে গেছে। ফলে বিচার বিভাগকে এখন আর ইচ্ছে করলেই স্বাধীন বলা যাবে না। এই অবস্থায় রাষ্ট্রের মালিক নাগরিকদের বিচার হবে আর সরকারের বিচার অনিশ্চিত থাকবে। কারণ সরকার বিচার বিভাগ পরিচালনা করে তাই।
সম্প্রতি একজন সদ্য সাবেক বিচারপতি সামসুদ্দিন চৈৗধুরী মানিক সাহেব বিচার বিভাগ ও প্রধান বিচারপতি কে নিয়ে গনমাধ্যমে অশালিন শব্দ ব্যবহার করে যা খুশি তাই বললেন যা আদালত অবমাননার সামিল। কিন্তু কেউ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। এরপর দুই মন্ত্রী কিছু বললেন যা আদালত অবমাননার অভিযোগ হয়েছে। মন্ত্রীদ্বয় ক্ষমা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন। আদালত ২০ মার্চ হাজির হয়ে বলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
একটু আগে কেন্দ্রিয় ব্যাংক থেকে বিরাট অংকের টাকা চুরির ঘটনায় দায়িত্ব কর্মে অবহেলার জন্য বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করেছেন। বিদায়কালে তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
২০০৭-২০০৮ সালের সরকারের নির্দেশে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভুল স্বীকার করেছেন ডেইলী স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ভুল স্বীকারের কারণে তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে ৭৮টি মামলা হয়েছে। তিনি এখন মামলায় হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন ।
ভুল, অন্যায় ও ক্ষমা, এই তিনটি শব্দ পৃথক পৃথক অর্থ বহন করে। তবে তিনটি শব্দেই বিচারের উপাদান আছে। তাহলে শব্দ তিনটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকলের প্রতি সমান দৃষ্টি রাখা ন্যায় বিচারের সামিল। মন্ত্রীদ্বয়, গভর্নর, সাবেক বিচারপতি ও সাংবাদিক মাহফুজ আনামের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার নিশ্চিত এখন সময়োপযোগী হয়ে গেছে। না হলে বর্তমান অবস্থা বলে দিচ্ছে, মন্ত্রীদ্বয় ও গভর্নর ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পেয়ে যাবেন। আর অপরাধ করেও তীরে উঠে যাচ্ছেন মানিক সাহেব। নৌকায় থেকে যাবেন মাহফুজ আনাম। যতদিন নৌকা ঘাটে নোঙর না করবে ততদিন মাহফুজ আনাম ঝড় তুফানের মধ্যে নৌকায় থেকে যাবেন।