ফেনী থেকে: অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর মামলায় জড়িয়ে বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত ফেনীতে দলটির প্রভাব হারিয়ে যাচ্ছে। ধসে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো। গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি ছাড়া সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে।
২০১৫ সালের আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হওয়ার পর দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই এখন নিজের গা বাঁচিয়ে চলছেন। হামলা-মামলার ভয়ের কথা বলে দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অনেকেই দূরে সরে রয়েছেন।
বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা বিএনপি থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব। অভ্যন্তরীণ কোন্দল উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। সব পর্যায়েই দল চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সম্মেলন করে নতুন কমিটিও হচ্ছে না।
নেতা-কর্মীরা আরও জানান, দল পুনর্গঠনে কেন্দ্র থেকে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থানীয় নেতাদের দ্বিধাবিভক্তির কারণে তা বার বার ব্যর্থ হয়েছে। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দলের ওপর এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
দলের দুরাবস্থার কারণে গত পৌরসভা নির্বাচনে ফেনীতে কোনো মেয়র প্রার্থী দিতে পরেনি বিএনপি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ফেনীর ৬টি উপজেলার প্রতিটিতেই বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী পরাজিত হয়।
এদিকে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে জানা যায়, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপির নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। ২০০৯ সালে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারকে সভাপতি ও জিয়াউদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। এর পর থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মোশাররফ-ভিপি জয়নালপন্থিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০১২ সালে সাঈদ এস্কান্দার মারা যাওয়ার পর অ্যাডভোকেট আবু তাহেরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।
বর্তমানে ভিপি জয়নাল ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রয়েছে ফেনী বিএনপি। দলে কোণঠাসা হয়ে দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করছেন ভিপি জয়নাল। রেহানা আক্তার রানুও ঢাকায় অবস্থান করেন। তবে ঢাকায় থাকলেও তার ইশারায় চলে ফেনী বিএনপির সব কার্যক্রম। ছাত্রদলের কমিটি গঠনও হয় রানুর পছন্দমতো। ছাত্রদলের আছে দু’টি জেলা কমিটি। সম্মেলনের মাধ্যমে একটি কমিটি ঘোষণার পর রানু ছাত্রদলের কেন্দ্র থেকে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করান।
বিএনপির সব কর্মসূচি এই দুই গ্রুপ আলাদা আলাদাভাবে পালন করে বলে জানা গেছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মতৃভাষা দিবসে দুই গ্রুপ আলাদাভাবে শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছে বলেও জানা গেছে। জাতীয় অন্যান্য দিবসেও পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে দুই গ্রুপ। যুবদলেও রয়েছে দু’টি গ্রুপ।
ছাত্রদলের দু‘টি জেলা কমিটির একটি ‘তৃণমূল ছাত্রদল’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমরা সম্মেলন করে কমিটি করেছি। আরেকটি কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা দুই কমিটিই আলাদা আলাদাভাবে কাজ করি।
জানা যায়, প্রতি বছর ১৫ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন করা হলেও গত ১৫ আগস্ট তা করা সম্ভব হয়নি।
তবে কিছু নেতাকর্মীর অভিযোগ, জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটি সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছে। এবার ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়ার জন্মদিনও তার নিজ জেলা ফেনীর বিএনপি পালন করেনি।
এদিকে আগামী ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এই কাউন্সিলের আগে উপজেলাগুলোতে সম্মেলন হয়নি। ২০০৯ সালে এই সব উপজেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দলের জেলা, উপজেলার সাংগঠনিক অবস্থা ও সম্মেলনসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
পৌর বিএনপির সভাপতি আলালউদ্দিন আলালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা ভয়-ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা ফোনেও কথা বলতে পারছি না। অনেকেই জেল খেটে বেরিয়েছেন, অনেকের মামলা আছে, আমার নামেও মামলা আছে। আমরা যারা জেলে ঢুকিনি তারা অপেক্ষায় আছি, কখন জেলে যাই।