ঢাকা : প্রশাসনে কাজের গতি বাড়াতে তিন মন্ত্রণালয়ে নতুন সাতটি আলাদা বিভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভাজন করে এসব বিভাগ করা হচ্ছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আরো নতুন বিভাগ সৃষ্টির প্রস্তাব থাকলেও তা আপাতত হচ্ছে না। বর্তমানে শুধু ওই তিনটি মন্ত্রণালয়ে নতুন বিভাগ করার কার্যক্রম চলছে।
নতুন সাত বিভাগের তিনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখা নিয়ে একটি। অপর দুটি হচ্ছে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা নিয়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভাজন করে জননিরাপত্তা বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বিভাগ হচ্ছে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভাজন করে করা হচ্ছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পরিবার কল্যাণ বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন করে সচিব থাকবেন এবং মন্ত্রণালয়ে কাজের গুরুত্ব অনুসারে একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হবে।
মন্ত্রণালয় বিভাজনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলামেইলকে জানান, তিনটি মন্ত্রণালয় বিভাজন করে নতুন সাত বিভাগ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভাজন করে ৩ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র ২ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বিভাজন করে করা হবে ২ বিভাগ।
তিনি বলেন, বিভাজনের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই এসব বিভাগ বাস্তবায়ন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাজনের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা নেই।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তিনটি বিভাগ করার যে চিঠি দেয়া হয়েছে তাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের অধীনে থাকবে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের আওতায় থাকবে সব ধরনের মাদরাসা এবং কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান।
আর উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় থাকবে ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্সসহ উচ্চতর শিক্ষা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতায় থাকবে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। আর আভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বিভাগের আওতায় থাকবে কারা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় থাকছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত সবকিছু এবং পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতায় থাকবে পরিবার পরিকল্পনা তথা পরিবার কল্যাণ কার্যক্রম।
জনপ্রশাসনে বর্তমানে সচিবের সংখ্যা ৭৫ জন। মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ৪৫। বিদ্যমান মন্ত্রণালয়ের ৮টিতে একাধিক বিভাগ রয়েছে। এতো সংখ্যক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থাকতে আরো ৭ নতুন বিভাগের প্রয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যেসব মন্ত্রণালয় বিভাজনের কথা বলা হচ্ছে সেসব মন্ত্রণালয়ে কাজের পরিধি বেড়েছে। তাই সেখানে একটি মাত্র প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এজন্য আরো দক্ষ, নিখুঁত এবং দ্রুত কাজ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাজন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এতে কর্মকর্তাদের ওপর চাপ কমবে। দেশবাসীও দ্রুত ও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন বলে মনে করেন তিনি।