ঢাকা: প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে ক্ষমতাসীনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, দিশেহারা হয়েছে তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বর্তমানে গণতন্ত্রের মরীচিকারও অস্তিত্বও নেই। দখলদার ক্ষমতাসীনরা বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, নিখোঁজ, অপহরণসহ অজস্র মামলা মোকদ্দমা ও গ্রেফতার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্মূল করার পুরনো পথেই এখনও হাঁটছে।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের অনেক উন্নয়নের কথা বলে থাকেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি বিরোধী দল দমনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলখানায় ভরানোর উন্নয়ন ছাড়া আর কিছুই করেননি।
বিএনপির এ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার পঁচাত্তরের সমাহিত বাকশালকে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করে বাংলাদেশে রাজার শাসন কায়েম করে দেশকে অজানা দুঃসহ আগামীর পথে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নিয়ে দেশের মানুষকে দুঃসহনীয় দুর্বিপাকের ভেতর আটকে রেখেছে। এরা মানুষের বাড়ি-জমি-জিরাত কেড়েছে, শেয়ার মার্কেটে লাখ লাখ মানুষের পকেট থেকে টাকা কেড়েছে, সরকারি ব্যাংক কেড়েছে, পদ্মাসেতু কেড়েছে, বিদ্যুৎ-গ্যাস কেড়েছে কুইক রেন্টালের নামে, ভোট কেড়েছে, নির্বাচন কেড়েছে, প্রশাসন-বিচার-আইন-গণমাধ্যমসহ সব কেড়েছে।
সরকার মানুষের বিবেকের ওপরও নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে, যেন কেউ সত্য-সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত কথা বলতে না পারে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, এজন্যই বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ২০১৬-২০১৮ টার্মের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাস চালিয়েছে। বিরোধী দলকে আটকিয়ে রাখা ছাড়া সরকার নিজেদের নিরাপদ মনে করে না ও স্বস্তি পায় না। এ কারণে নির্বাচন, ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবকিছুকেই তারা বিপজ্জনক মনে করছে। সুতরাং দখল করা ও সবকিছু কেড়ে নেওয়াই হচ্ছে এখন তাদের রাজনৈতিক নীতি ও দর্শন। যেভাবে পুলিশ-র্যাবকে নিজেদের দলীয় লোক দিয়ে পরিচালিত করা হচ্ছে, জনপ্রশাসনকে যেভাবে আওয়ামীকরণ করা হয়েছে, যেভাবে গণতন্ত্র হত্যার লুকিয়ে থাকা ‘মিরজাফর’ সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ও ও ‘বিচারাঙ্গনের খলনায়ক’ বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিককে দিয়ে বিচার বিভাগকে দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল, তাদের সেই অপচেষ্টার বিষয়ে যখন কেউ সত্য কথা বলেন, তখনই তাদের গা জ্বালা করে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ন্যায়সঙ্গত, আইনসঙ্গত, সংবিধানসঙ্গত বক্তব্য দেওয়ার কারণেই ক্ষমতাসীনরা দিশেহারা হয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা দেশদ্রোহী মামলা দিয়েছে। তারা জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রধান প্রতীক খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার ও মামলার ভয় দেখিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করে সারাদেশ দখল করে নিতে চায়।
কিন্তু তাদের দিবাস্বপ্ন ও স্বেচ্ছাচারী পাথরপ্রতীম দুঃশাসন যে যেকোনো মুহূর্তে জনরোষে ধুলোয় লুটিয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আইডিইবি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী প্রকৌশলী মো. কবির হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. মীর হোসেন পাটোয়ারী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মাদ গোলাম কিবিরিয়া প্রমুখ।