ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দু’মাস পেছানোর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ও মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রস্তাবে মার্চের পরিবর্তে মে মাসে প্রথম ধাপের নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানানো হলেও তাতে সায় মেলেনি। ইসি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলসহ আরও কয়েকটি কারণে নির্বাচন পেছানোর পক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সে ক্ষেত্রে এপ্রিলের শেষে তফসিল ঘোষণা করে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়েছিল।
এদিকে, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার চালানোর সুযোগ বন্ধ রেখে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনের মতো এবারও প্রচারের বাইরে রাখা হয়েছে এমপিদের। তবে শর্তসাপেক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যানরা প্রচারে নামার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের সরকারি সুবিধা ত্যাগ করে
প্রচার চালাতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্চের শেষ সপ্তাহের মধ্যে ৫৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আয়োজনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে মে মাসে নির্বাচন করতে হলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৭৭৪টিতে। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের পুরো দায়িত্ব ইসি নিজেই পালন করে থাকে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ধাপের নির্বাচনের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ও তালিকা অনুযায়ী ইসি আয়োজন করে থাকে। আইন অনুযায়ী মার্চের মধ্যে যেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক, তার তালিকাও মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে। এখন তারা কোনো কারণে এ নির্বাচন পেছাতে চাইলে ইসির কাছে কারণ উল্লেখ করে চিঠি দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ রেখে নতুন আইন পাস করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনাবিধি ও আচরণবিধি সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত করেছে ইসি। আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর এই বিধি অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের সময় আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করা আছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আচরণবিধি চূড়ান্ত :প্রতীক বরাদ্দের আগে ইউপি নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন না। প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারের সুযোগ পাবেন তারা। যদিও স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচনগুলোতে ভোট গ্রহণের ২১ দিন আগে থেকে প্রচার চালানোর সুযোগ রয়েছে। ইউপিতে ২১ দিন আগে প্রচারের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে গতকাল কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইউপির বিদ্যমান আচরণবিধিতে বিধি লঙ্ঘনের জন্য কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ছিল না ইসির। কিন্তু দলীয় ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচনের আইন প্রণয়নের সংশোধিত বিধিতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রচারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা অংশ নিতে পারবেন। তবে এ জন্য তারা সরকারি সুবিধা নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের জন্য প্রচারের ক্ষেত্রে বাধা থাকবে না। তবে সরকারি সুবিধা বাদ দিতে হবে। সরকারি সুবিধাসহ প্রচারে নামতে পারবেন না।
এর আগে গত রোববার ইউপির নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোটারদের সমর্থনযুক্ত সই বাধ্যতামূলক থাকলেও ইউপিতে তা তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে হলফনামা ও ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) দিতে হবে না।