ঢাকা: বর্তমান জাতীয় সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালার সঙ্গে তুলনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দেয়া বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান পরিষ্কার করে টিআইবি বলছে, পুতুল নাচের নাট্যশালা- মন্তব্যটি টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের। তিনি তথ্য ও বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে নাগরিক অধিকারে নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করেছেন। এটি টিআইবির প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান নয়। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে টিআইবি।
গত ২৫ অক্টোবর টিআইবি কার্যালয়ে দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন নিয়ে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, সংসদের অধিবেশন যখন চলে তখন আমাদের কাছে পুতুল নাচের নাট্যশালার মতো মনে হয়। ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য দাঁড়িয়েছে জাতীয় সংসদে।
এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশের রাজপথ ও সংসদকে অকার্যকর করার জন্য টিআইবি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত করছে। বর্তমান সংসদে ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্যের অভিযোগ আনা টিআইবির আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। আ স ম ফিরোজ আরো বলেন, জাতায় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে- এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার টিআইবিকে কে দিয়েছে? টিআইবি নিজেরাই নাচের পুতুল। তাদের প্রভুদের সুতার টানেই তারা নাচে। বর্তমার পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করার অধিকার টিআইবিকে দেয়া হয়নি। এ ধরনের মন্তব্যের তারা সীমা লঙ্ঘন করেছে।
২৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তা অমার্যনীয় উল্লেখ করে ২৯ অক্টোবর ১৪ দলের মুখপাত্র মো. নাসিম বলেন, ‘জনগণের কাছে তাদের (টিআইবি) ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে জনমত গড়ে তুলে ১৪ দলের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিবৃতিতে টিআইবি বলছে, দ্বিমুখী অবস্থান ও আত্মপরিচয়ের সঙ্কটের প্রতিফলন ঘটেছে কথিত প্রধান বিরোধী দলের। প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে এ ধরণের দ্বিধা ও দোদুল্যমানভাবে পুতুলসম আচরণ মনে হতে পারে। তবে এরূপ মন্তব্য করে কাউকে আহত করা নির্বাহী পরিচালকের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং এ অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে সংসদকে আরো কার্যকর করার উপায়ের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনও বিতর্কিত ছিল বলে সর্বজনবিদিত। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা বক্তব্যেও বিভিন্নভাবে তার প্রতিফলন ঘটেছে বলে সেই বিবৃতিতে বলা আছে।
টিআইবির আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলার জবাবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে এসব মর্যাদাহানি কর অভিযোগ যেমন নতুন কোনো বিষয় নয়, তেমনি ভিত্তিহীন। টিআইবি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে একটি পয়সাও তার অর্থায়নের জন্য গ্রহণ বা ব্যয় করতে পারে না। তাছাড়া বিধি-নিয়ম অনুযায়ী টিআইবি তার আয়-ব্যয়ের সকল হিসাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত সরবরাহ করে এবং আগ্রহী সকলের অবগতির জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে।
টিআইবি সম্পর্কে আইএস বা অন্য কোনো জঙ্গি ও দলীয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ অর্থহীন ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সরকার বা অন্য যেকোন পক্ষ যদি এ ধরনের বিষয়ে অনুসন্ধানে আগ্রহী হন, তাহলে টিআইবি সর্বতভাবে সহায়তা প্রদানে উদ্যোগী হবে।