ঢাকা: দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলাগুলো পিছিয়ে রয়েছে। নানা রকম জটিলতার কারণে এসব জেলা পুনর্গঠনের কাজ এগোচ্ছে ধীরগতিতে। বিশেষ করে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ আঁকড়ে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলাগুলোতেই এ সমস্যা বেশি।
বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অন্তত ৩৫টি সাংগঠনিক জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নিজ নিজ জেলায় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
একইসঙ্গে কেন্দ্র ও জেলার দায়িত্বে থাকা এসব নেতারা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে জেলে, আত্মগোপনে বা দেশের বাইরে অথবা অসুস্থ থাকায় কমিটি পুনর্গঠন করতে পারছেন না। স্থানীয় নেতারা কমিটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দিলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতিতে তা সম্পন্ন করতে পারছেন না।
আবার কোনো কোনো জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে না থাকলেও কমিটি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তাদের প্রভাবমুক্ত হতে পারছেন না তৃণমূল নেতারা।
অভিযোগ রয়েছে, জেলে থাকা নেতারা মামলায় হাজিরা দেওয়ার সময় আদালত চত্বরে উপস্থিত হওয়া তৃণমূল নেতাদের সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, জামিনে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত যেন কমিটি পুর্নগঠনের কাজ সম্পন্ন না হয়। কারামুক্ত হয়ে তারাই কমিটি পুনর্গঠন করবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টানা ৬ মাস কারাগারে থাকার পর গত জুলাই মাসে জামিনে মু্ক্তি পান তিনি। এরপর দুই দফায় সিঙ্গাপুর-আমেরিকায় চিকিৎসা শেষে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
সূত্র মতে, তার অবর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির পুনর্গঠনের কাজ মোটেই এগোতে পারেননি স্থানীয় নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে ঠাকুরগাঁও গিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কমিটি পুনর্গঠনের জন্য চলতি সপ্তাহে ফের ঠাকুরগাঁও যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা থাকায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারিনি। চলতি সপ্তাহে তিনি (ফখরুল) ঠাকুরগাঁও আসবেন। তারপর আমরা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করবো।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ায় গত ৬ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরুর পরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। সম্প্রতি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির এই সাংগঠনিক সম্পাদকের জেলায়ও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ খুব একটা এগোয়নি। রোববার (২৫ অক্টোবর) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপজেলা ও পৌরসভার কাউন্সিল করতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা বলেন, গ্রেফতার এড়াতে জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি আদালতে আত্মসমপর্ণ করে জামিন পেয়েছেন। এখন আমরা কাজ শুরু করবো।
কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক মামলার আসামি দুলু বেশিরভাগ সময়ই থাকেন জেলে বা আত্মগোপনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট কেন্দ্র থেকে দল পুনর্গঠনের জন্য তৃণমূলে চিঠি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত এলাকায় যেতে পারেনিনি দুলু। ফলে তাকে বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে পারছেন না জেলা বিএনপি।
রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সম্প্রতি বলেন, সরকার আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিচ্ছে। এলাকায় যেতে পারছি না। কমিটি পুনর্গঠন করবো কীভাবে? এবার নাটোর জেলাকে বাদ দিয়েই বিএনপি পুনর্গঠন করতে হবে।
কুমিল্লা জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে না থাকলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার কারাগারে থাকায় কমিটি পুনর্গঠন করতে পারছেন না কুমিল্লা ( উত্তর-দক্ষিণ) জেলা বিএনপির নেতারা।
সূত্র মতে, সম্প্রতি নাশকতার একটি মামলায় কারাগার থেকে কুমিল্লার একটি আদালতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারকে হাজির করা হয়। ওই সময় আদালত চত্বরে উপস্থিত স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জামিনে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জেলা বিএনপি পুনর্গঠনের কাজে হাত না দিতে।
কুমিল্লা (উত্তর) জেলা বিএনপির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার জেলে থাকায় এবং শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ দেশের বাইরে থাকায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারিনি। তাছাড়া কারাগারে হাজিরা দেওয়ার সময় এম কে আনোয়ার আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, শীর্ষ নেতারা জামিনে মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।
জানা গেছে, এভাবে সারা দেশে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে একাধিক পদধারী কেন্দ্রীয় নেতারা বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। ফলে এক মাস আগে বেঁধে দেওয়া সময় পার হয়ে গেলেও তৃণমূল নেতারা দল পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে পারছেন না।