রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে বন বিভাগের সৃজিত বাঁশ বাগানের বাঁশ কেটে নেওয়ার উৎসবে নেমেছে দূর্বৃত্তরা। ৫ আগস্টের পর থেকে শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের সৃজিত বাঁশ বাগানের বিশ একর বনভূমি থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ ভাবে কাটা হচ্ছে বাঁশ। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। উজাড় হচ্ছে বনের বাঁশ। উপকারভোগিরা হচ্ছে বঞ্চিত। বিট কর্মকর্তার উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে দূর্বৃত্তরা।
জানা যায়, শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের পোষাইদ এলাকায় বন ভূমিতে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে তিন হেক্টর বা ৭.৪৭ একর বাঁশ বাগান করে বনবিভাগ। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে পাশেই করা হয় পাঁচ হেক্টর বা ১২.৩৫একর বাঁশ বাগান। দু’দফায় ১৯.৭৬একর বনভূমিতে সৃজিত বাঁশ বাগান। এসব বাগানে রোপন করা হয়েছিলো বরাক, মাহাল,রেঙ্গুন, ছিপ মলি ও মলি জাতের বাঁশ। গত বারো বছরে ওই বন ভূমিতে জন্মেছে বিপুল পরিমান বাঁশ। পুরো বাগান এলাকায় বনের ভেতর রয়েছে হাজার হাজার বিভিন্ন জাতের বাঁশ। বনের বাঁশ গুলো বিক্রির উপযোগী হয়েছে। এসব বাঁশ বিক্রি করলে এক দিকে সরকারের রাজস্ব আসতো। অপর দিকে লাভবান হতো উপকার ভোগীরা।
গত পাঁচ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শ্রীপুরে জেঁকে বসেছে বনখেকুরা। বন ভূমি জবর দখল করেই ক্ষান্ত নয়।বিক্রি করছে বনের মাটি,তৈরি করছে নতুন নতুন বসতি। বন খেকু দের শোন দৃষ্টি এখন সৃজিত বনের উপর।সৃজিত বাঁশ বাগান কেটে বিক্রি করছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি সাতখামাইর বিটের বনাঞ্চলে বনবিভাগ মাইকিং করে জানান দেন,“বনের জমিতে বাড়ি ঘর নির্মান, বনের গাছ বাঁশ কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ।” বন অপরাধীদের বিরোদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বনের বাঁশ উজাড় হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোষাইদ এলাকার বরমী-জৈনাবাজর আঞ্চলিক সড়কের লাগুয়া গভীর গজারী বন। বনের ভেতর দিয়ে গেছে ইট সলিং রাস্তা। সে রাস্তা ধরে এগোলে সামনে মেঠু পথ। পথের পাশেই চোখে পরে বাঁশ বনের ক্ষত। রাস্তার পাশে পড়ে আছে বাশের কঞ্চি। ওই পথ ধরে বনের গিয়ে করিরের বাড়ির দু’পাশে দেখা যায় বাঁশে স্তুপ। একই দৃশ্য পাশের আজিজুলের বাড়ির পাশে। কবির ও মফিজুল বনের বাঁশ বিক্রি করেছে এমন অভিযোগ প্রতিবেশীদের । বিক্রিত বাঁশ গুলো বেপারীরা কেটে রেখেছেন ।শুধু কবির –মফিজুল নয় এর আগে অরো অনেকে বনের বাঁশ অবৈধ ভাবে কেটে বিক্রি করেছে। খবর পেয়ে বনবিভাগ ঘটনাস্থল থেকে মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় দুইশত বাঁশ আটক করে।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয়রা জানান,বন বিভাগের মাইকিংয়ের পর বণ খেকুরা বাঁশ বাগানে হামলে পড়েছে। প্রায় প্রতিনিয়ত কেটে নিচ্ছে বাঁশ। কিছু অসাধু উপকার ভোগী ও একটি সংঘ বদ্ধ চক্র বনের সম্পদ লুটপাট করছে। বন থেকে কেটে নিচ্ছে শতশত বাঁশ। এতে উজাড় হচ্ছে বনের বাঁশ। বাঁশ কাটার সাথে জড়িতরা প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দিয়ে থাকে,বনের লোক কিছু করতে পারবেনা। দাড়িয়ে থেকে গাড়িতে বাঁশ ভরে দিবে। দিন ভর বনাঞ্চলের বাঁশ কাটা হলেও বন বিভাগের কোন লোকজন আসেনা। এভাবে বনের বাঁশ লুটপাট এর আগে কখনো দেখিনি। একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাতারাতি বনথেকে মূল্যবান বাঁশ কেটে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সাতখামাইরের ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, বন ও বনজ সম্পদ রক্ষার্থে অনুমান দেড় মাস পূর্বে বিট বনাঞ্চলে মাইকিং করে এলাকা বাসীকে সতর্ক করে দেই কেউ যেন বনের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, বন ভূমি দখল, গাছ,বাঁশ কাটে থেকে বিরত থাকার জন্য। নতুন করে গড়ে উঠা একটি চক্র বাঁশ কেটেছে। অমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বাঁশ উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় আ.বাতেনের ছেলে মো. জাকির হোসেন রাজু বাধা সৃষ্টি করে। সব গাড়িকে নিষেধ করে বাঁশ না আনতে। সব শেষ রাত এগারোটার দিকে গোসিংগা থেকে গাড়ী এনে ওই বাঁশ উদ্ধার করি।
শ্রীপুর রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক ও রেঞ্জকর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান জানান, বনের ভেতর বাঁশ কাটার খবর পেয়ে বিট কর্মকর্তােক পাঠিয়েছি। কিছু বাঁশ উদ্ধার করা হয়েছে। বনের বাঁশ,গাছ কাটা,জমি দখলের সাথে যারা জড়িত বা বনবিভাগের কাজে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।