মিনায় পদদলিত হয়ে নিহত কমপক্ষে ৭১৭ হজযাত্রী  

Slider টপ নিউজ

jbj

 

লাশের পর লাশ। লাশের স্তূপ। যে সফেদ দু’টুকরো কাপড়ে বুধবার আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিয়েছিলেন সেই পোশাকেই চিরবিদায় নিলেন কমপক্ষে ৭১৭ হাজী। বুধবার তারা আল্লাহর দরবারে আর্তচিৎকারে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন এই বলেÑ হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোন শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত এবং সব রাজত্ব আপনারই।
সত্যি এমনভাবে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কার মিনায় পদদলিত হয়ে নিহত হলেন কমপক্ষে ৭১৭ হাজী। সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়ে আছে নিথর দেহগুলো। যতদূর চোখ যায় শুধু লাশ আর লাশ। বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে এসব হাজীর লাশ। আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল আযহা পালিত হয়েছে সৌদি আরবে। এমন উৎসবের দিনে আল্লাহর এতগুলো মেহমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সর্বত্র। সারা মুসলিম বিশ্ব শোকে স্তব্ধ। পদদলনে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০০ হাজী। এ ঘটনায় শোকবার্তা দিয়েছেন অনেক রাষ্ট্রনায়ক। তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় নি, নিহত ও আহতরা কোন দেশের নাগরিক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গালফ নিউজ। সৌদি আরবের বিভিন্ন টেলিভিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বলা হয়, সৌদি আরবের সিভিল ডিফেন্স এ তথ্য দিয়েছে। তারা জানিয়েছে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। কি কারণে এ পদদলনের ঘটনা ঘটেছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায় নি। তবে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার পরে হজযাত্রীরা মিনায় সমবেত হন আজ। এখানে তারা শয়তানের উদ্দেশে আজ পাথর নিক্ষেপ করবেন। এটাই হজের বড় কাজগুলোর শেষ ধাপ। সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ হজযাত্রী সমবেত হয়েছেন এবার হজ করতে। এর বেশ কয়েক বছর ্আগে একবার পদদলনে বিপুলল সংখ্যক হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। প্রায় এক দশক আগে শয়তানকে পাথর মারার সময় হুড়োহুড়িতে ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তারপর সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে এবার হজ শুরুর আগে গত ১১ই সেপ্টেম্বর মক্কায় ক্রেন ভেঙে পড়ে তাতে নিহত হন কমপক্ষে ১০৯ হজযাত্রী। ওদিকে আল জাজিরা জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা কমপক্্েষ ৪৫০। মক্কা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক বাসমা আতাসি বলছেন, এবার শয়তানকে পাথর মারার স্থানে ঘটেনি দুর্ঘটনা। ঘটেছে হজযাত্রীদের ক্যাম্পের মধ্যবর্তী রাস্তায়। তিনি বলেন, ওই রাস্তাটির নাম স্ট্রিট ২০৪। শয়তানকে উদ্দেশ্য করে যেখান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হয় সেখানে এ ঘটনা ঘটেনি। ওদিকে মক্কা থেকে তাদের অন্য সাংবাদিক ওমর আলসালেহ বলেছেন, আহত অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহতের যে সংখ্যা জানা যাচ্ছে তা প্রাথমিক। উদ্ধার তৎপরতায় নামানো হয়েছেছ ৪০০০ নিরাপত্তা রক্ষী। ব্যবহার করা হচ্ছে ২২০টি এম্বুলেন্স। ওদিকে আরব নিউজ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শয়তানের উদ্দেশে পাথর মারতে জামারায় যাওয়ার পথে।
ভয়াবহ যেসব দুর্ঘটনা
এর আগে ২০০৬ সালে মিনা উপত্যকায় পদদলিত হয়ে মারা যান ৩৬০ হজযাত্রী। সেবার শয়তানের উদ্দেশে পাথর মারার স্থান জামিরায় অতিরিক্ত ভিড়ে এ ঘটনা ঘটে। ওই বছর হজ শুরুর আগের দিন মক্কায় মসজিদুল হারামের কাছে একটি আট তলা হোটেল ধসে পড়ে। এতে কমপক্ষে ৭৩ জন নিহত হন। এর দু’বছর আগে মিনায় হজযাত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন কমপক্ষে ২৪৪ হজযাত্রী। পবিত্র হজের শেষ দিনে ওই ঘটনায় আহত হন কয়েক শত হজযাত্রী। ২০০১ সালে হজের শেষ দিনে নিহত হন কমপক্ষে ৩৫ হজযাত্রী। সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালে। সেবার মক্কামুখী একটি সুড়ঙ্গ পথে অতিরিক্ত ভিড়ে পদদলিলত হয়ে নিহত হন কমপক্ষে ১৪২৬ হজযাত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *