রমজান আলী রুবেল শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে নদণ্ডনদী, সরকারি খাল, বন বিভাগের জায়গাসহ কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে। আর চড়া দামে সেই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে নিচু জমি ভরাটসহ ইটভাটা টাইলস তৈরি কারখানা গুলোতে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে বা গোপনে রাতের আঁধারে পরিবেশ আইন অমান্য করে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ভ্যাকু দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকগুলোতে বোঝাই করা হচ্ছে।
প্রতিটি জায়গা থেকে মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ১০-১৫টি করে ট্রাক। এতে পরিবেশ ও উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্রমেই উপজেলাব্যাপী গড়ে ওঠা মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে নানা কৌশলে। মাটির ট্রাকগুলো উপজেলার প্রত্যেকটি অঞ্চল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিনিয়তই ইটভাটার মাটির ট্রাকের চাপায় প্রাণ যাচ্ছে পথচারী শিশু-কিশোর ও স্কুল শিক্ষার্থীর।
পরিবেশ ও নদী রক্ষা কমিটিসহ নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নদণ্ডনদী ও খালের মাটি কাটা ও বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ আজও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২নং গাজীপুর ইউনিয়নের নিজমাওনা নয়াপাড়া সরকারি খাস জমি থেকে দীর্ঘ দিন ধরে মাটি কেটে আসছে, শুধু তাই নয় শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। যেমন নদীর পাড়ের জমি থেকে এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যক্তি।
এদিকে কর্নপুর, পটকা, নারায়ণপুর পেলাইদ, তেলিহাটি ইউনিয়নের মুরগির বাজার, তালতলী, উত্তর পেলাইদ, সাইটালিয়া, মাওনা , গাজীপুর ইউনিয়নের নিজমাওনা, শৈলাট, নয়াপাড়া, কাওরাইদ ইউনিয়নের বলদী ঘাট, সোনাব, শিমুলতলা, বিধাই হয়দেবপুর ও বরমী এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া উজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে বিভিন্ন ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। ইটভাটার মালিকরা দালালের মাধ্যমে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি ক্রয় করছেন। আবার কেউ কেউ লোভে পড়ে নগদ টাকার আশায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ২০/৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমিই ডোবায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিমত, প্রতি বছর শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে।
এলাকাবাসী জানায়, গ্রামীণ পাকা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক নির্মাণের দু-এক বছরের মধ্যে তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
শ্রীপুর উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মাটির ব্যবসা করে আসা,শাজাহান মিয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যেই আমাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে, যে টাকাই আমরা জরিমানা দেই সে টাকা তুলতে আমাদের মাত্র দুই দিন সময় লাগে, তাহলে বুঝাই যাচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা জরিমানা দেওয়ার পরও তারা কি করে ব্যবসা পরিচালনা করে।
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা কাটা, নদী থেকে বালু উত্তোলন, বনের বৃক্ষ কর্তন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও নিষিদ্ধ। অথচ আইন অমান্য করে পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞের উৎসবে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে বালু, নদী ও বন দস্যুদের। এর ফলে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ ও জনপদের।
তিনি আরো বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদারকি না করায় এমনটি হচ্ছে। তাদের ঘুম ভাঙা জরুরি। কঠোর হওয়া জরুরি। আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকা জরুরি। এসবে ব্যর্থ হলে বা পরিবেশ বিনষ্টকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও স্বাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হব। (বিস্তারিত দ্বিতীয় প্রতিবেদনে)