আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না : শেখ হাসিনা

Slider জাতীয়


বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের ভোটাধিকার অর্জন করেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস তাদের নেই। তারা পারবে না।
ভোট চুরি করতে পারবে না বলেই বিএনপি ভোট বর্জন করছে দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন আজ তারা বর্জন করছে। বর্জন করাটা খুবই স্বাভাবিক। ভোট চুরি করতে পারবে না। এজন্য নির্বাচন করবে না। কারণ, এর আগে তো ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের (বিএনপির) সৃষ্টি। ক্ষমতা চুরি, ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি। এ ছাড়া আর কিছু পারে না। সেজন্য ইলেকশন করতে চায় না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। বাংলা ট্রিবিউন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ক্ষমতায় আসতে আওয়ামী লীগের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। আপনারা প্রত্যেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে তার জবাব দেবেন। আপনার ভোট আপনি দেবেন। ভোট রক্ষা করবেন। কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। আপনারা ভোট দেবেন। বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, তারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়। বাস, গাড়ি, রেল পুড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ক্ষমতায় আছি। ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকার কারণে অগ্নিসন্ত্রাসের সময় বাদে অন্য সময়ে মানুষ শান্তিতে থাকায় আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা কাজ করে মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই। আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তারাই ভোট চুরি করে। ভোট চুরি ছাড়া তারা জিততে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনেই সেটা প্রমাণিত সত্য।

আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের কল্যাণে সবকিছু করেছে উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজ উন্নয়ন হয়েছে। আমরা সবার জন্যই কাজ করি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আজ তো দারিদ্র্যের হাহাকার শোনা যায় না। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কর্মসংস্থান আমরা বৃদ্ধি করেছি। আজ বেকারত্ব মাত্র তিন ভাগ। ইনশাআল্লাহ সেটাও থাকবে না।
ঢাকা শহরের উন্নয়নে সরকারের নেয়া কর্মসূচিগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের পানিসমস্যা দূর করেছি। বিদ্যুতের সমস্যা দূর করেছি। সারা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ঢাকার যানজট দূর করতে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ঢাকার কোথাও যাতে যানজট না থাকে সেজন্য আমরা মোট ছয়টি মেট্রোরেল করে দেবো। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমরা করে দিয়েছি। নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ঢাকা ঘিরে থাকা নদীগুলো পুনঃখনন করে দূষণমুক্ত ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।

উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম চিন্তা করে হাসপাতাল করে দিয়েছি। ঢাকা মেডিক্যালে চার হাজার মানুষের চিকিৎসা পায় সেজন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার ডিজাইন করা হয়েছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে নির্মাণকাজ শুরু করব। ঢাকা ঘিরে ওয়াটার ওয়ে করার ব্যবস্থা করা হবে। আমরা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ঢাকা শহরের সব তার পর্যায়ক্রমে মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাব। তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে যত মার্কেট আছে বহুতল ভবন করে আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে দেবো। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের বরাদ্দ দেয়া হবে। বস্তিবাসীদের ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেয়া হবে। জেলা পর্যায় পর্যন্ত হরিজন-দলিত শ্রেণীদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সব ধরনের কল্যাণ করার, মানুষের যা যা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা হয়। এটা প্রমাণিত সত্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এর আগে জিয়াউর রহমান ছিল, এরশাদ ছিল, খালেদা জিয়া ছিল। বাংলাদেশের জনগণকে কিছু দেয়নি। নিজেরা নিয়েছে। নিজেরা অর্থশালী সম্পদশালী হয়েছে।

সুশীলসমাজের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন। নানান কথা বলেন। মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। তাদের কাজই হচ্ছে বিভ্রান্ত করা। গণতন্ত্র থাকলে তাদের নাকি মূল্য থাকে না। আর যদি কোনো অস্বাভাবিক সরকার হয় উনাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। কার কত মূল্য এখন দাঁড়িপাল্লায় মেপে তাদের দেখতে হবে। কার কত মূল্য সেটা আমরা দেখতে চাই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ঢাকার ১৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ১৫টি রতœ আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। তারা আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করবে। ঢাকার মানুষের সেবা করবে।
নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নুহ নবীর নৌকা মহাপ্লাবনে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকাই মানুষের প্রাণ বাঁচায়। নৌকাই উন্নতি দেয়। নৌকা নিশ্চিত জীবন দেয়। শান্তি দেয় সমৃদ্ধি দেয়। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে আজ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ-ডিজিটাল বাংলাদেশ। নৌকায় ভোট দেবেন। আমরা ১৯৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। প্রথম যারা ভোটার তাদের আহ্বান জানাব নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *