নৌকা হলো নুহ নবীর, নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

Slider সিলেট


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে উন্নয়নের জন্য নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়যুক্ত করুন। কারণ, নৌকা স্বাধীনতার ও উন্নয়নের প্রতীক। এই নৌকা নুহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবীর নৌকা। এ নৌকায়ই মানবজাতিকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ তা’য়ালা। নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার নৌকা যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।

বুধবার বিকেলে ৪টায় সিলেটের ঐতিহাসিক সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নৌকার প্রথম নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এরআগে বিকেলে সোয়া ৩টার দিকে আলিয়া মাদরাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন তিনি। জনসভাস্থলে পৌঁছে তিনি জাতীয় পতাকা নেড়ে নেতা-কর্মীদের উৎসাহিত করেন। এই জনসভার মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করলেন তিনি।

জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, দেশের গ্যাস বিক্রির প্রস্তারে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা আসতে দেয়া হয়নি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো কাজ করেনি বিএনপি ভোট কারচুপি আর গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিল। আল্লাহ্ জন বুঝে ধন দেয়। তাদের হাতে সম্পদ দিলে তা নষ্ট হয়, আর আমাদের হাতে এলে তা জনগণের কল্যাণে কাজ করে। যে কূপে বিএনপি গ্যাস পাইনি, সেই কূপ খনন করে এখন গ্যাস পাওয়া গেছে। আর দেশের জনগণ বার বার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। আওয়ামী লীগ যখন দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে, তখন বিএনপি আগুন দিয়ে তা ধ্বংস করছে। তাদের কোনো মন্যুষত্ব নেই বলে ট্রেন-বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার মতো নির্মম ঘটনা তারা ঘটাতে পারে।

সিলেটের উন্নয়নকাজ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যের অভাব ঠেকাতে কোনো জমি অনাবাদি রাখা যাবে না। গত ১৫ বছরে সম্পন্ন হওয়া বিভিন্ন উন্নয়নকাজের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে নতুন কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেন, আবার ক্ষমতায় গেলে ঢাকা-সিলেট ছয় লেন হবে। সিলেটেও মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হবে। কিন ব্রিজের পাশে নতুন সেতেুও নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও সিলেটে ১০০ বেড সমৃদ্ধ বার্ন ইনস্টিটিউট তৈরি করা হচ্ছে। যানজট কমাতে রিংরোড নির্মাণ করা হবে সিলেটে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য করতে গিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়। আজ তারা বিএনপি-জামায়াত আগুন দিয়ে বাস-ট্রেন পোড়াচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে। তাদের নাশকতার শিকারে মানুষ এখন দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।

এ সময় তারেক জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, লন্ডন থেকে তার নির্দেশে জ্বালাও পোড়াও করে মানুষ মারছে বিএনপি।

তিনি আরো বলেন, তারা ভোট দিতে দেবে না; ভোটে বাধা দেয়ার এত সাহস তারা কোথায় পেয়েছে? তাদের জবাব দিতে হবে। লন্ডন থেকে হুকুম আসে আর এখানে কিছু মানুষ আগুন দেয়। তাদের মনে রাখা উচিত, আগুন নিয়ে খেললে, সেই আগুনেই তাদের হাত পুড়ে যাবে। বিএনপি ভেবেছিল, দু’চারটা গাড়ি পোড়ালেই সরকার পড়ে যাবে। আসলে অতভাত দুধ দিয়ে কেউ খায় না। দুর্নীতিবাজ, লুটেরা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ মেরে, ভোট বানচাল করতে চায়। সেটা করা যাবে না। উন্নয়ন ধরে রাখতে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিজয়ী করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নি সন্ত্রাসীদের এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। সাধারণ মানুষ ভোট চায়, উন্নয়ন চায়। তাই বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধে তারা সাড়া দিচ্ছেন না।

বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সিলেটে যাদের নৌকা প্রতীক দিয়েছি, তাদের বিজয়ী করুন। কারা কারা আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন হাত তুলে দেখান এবং ওয়াদা করুন। এ সময় উপস্থিত সবাই হাত তুলে নৌকায় ভোট দেয়ার ওয়াদা করেন।

সিলেট মহনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান এবং মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের যৌথ সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গির কবির নানক, আব্দুর রহমান, সৈয়দা জেবুন্নেসা হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, বাহা উদ্দিন নাছিম ও মাহবুবুল আলম হানিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, শেখ হেলাল এমপি, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, অভিনেত্রী তারিন জাহান প্রমুখ।

এদিকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে হজরত শাহজালাল (র.) ও হজরত শাহপরাণের (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন। এ সফরে তার সাথে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়াও কেন্দ্রীয় ও সিলেটের নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *