সরকার পতনের আন্দোলন নভেম্বরেই চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় বিএনপি

Slider রাজনীতি


ক্ষমতাসীন দলের ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারির মধ্যে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সরকার পতনের জন্য কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। ফলে আগামী মাসের শুরুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে।

বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর তাদের দল ঢাকায় জনসভা করতে পারে। সেই জনসভা থেকেই তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস অভিমুখে পদযাত্রা অথবা অফিস ঘেরাও, সচিবালয় বা নির্বাচন কমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং ঢাকার প্রবেশপথ অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে।

তবে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বিএনপির নেতারা বলেন, তাদের কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা রোধ করা এবং অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সরকারকে বাধ্য করা।

এদিকে, সরকারের পদত্যাগ এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে বুধবার রাজধানীতে জনসভা করবে বিএনপি।

সমাবেশ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেবেন। কঠোর কর্মসূচি এড়ানোর জন্য তাদের এক দফা আন্দোলন মেনে নিতে সরকারকে শেষ সতর্কবার্তা দেয়ার কথাও রয়েছে তার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তাই তফসিল ঘোষণার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে আমরা কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে চাই। ‘আমরা মনে করি, আমাদের আন্দোলন ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।’

যেসব রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করছে, তাদের সাথে বৈঠকে বসে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে মতামত নিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

বেশিরভাগ দলই সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘেরাও বা গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রার মতো কর্মসূচির পরামর্শ দিয়েছে।

এছাড়া রাজধানীসংলগ্ন জেলা গুলো থেকে ঢাকা অভিমুখে রোড মার্চ, ইসি ও সুপ্রিম কোর্ট অভিমুখে পদযাত্রা এবং শেষ পর্যায়ে হরতাল-অবরোধসহ আরো কিছু কঠোর কর্মসূচির সুপারিশও করা হয়।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিএনপি যদি রাজধানী অবরোধের মতো কর্মসূচি নেয়, তাহলে তাদের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক যুব সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন,‘আমরাও প্রস্তুত। বিএনপি ঢাকা অবরোধের চেষ্টা করলে তাদের অবরুদ্ধ করা হবে। বিএনপিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হবে এবং পালানোর কোনো পথ থাকবে না। তারা (হেফাজত কর্মীরা) কি রাতের অন্ধকারে শাপলা চত্বর থেকে পালিয়ে যায়নি? বিএনপিকে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।’

তিনি আরো অভিযোগ করেন, গত বছরের ডিসেম্বরের মতো এবারো সারাদেশ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় জড়ো হতে শুরু করেছে। ‘হোটেলের সব কক্ষ বুক করা হয়েছে। তারা ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছেন। তারা আবারো সরকারকে উৎখাত করার স্বপ্ন দেখছে।’

তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্গাপূজার পর ঢাকাকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে একটি অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মাধ্যমে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যম ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে অংশ নেবেন এবং যেকোনো মূল্যে তা সফল করবেন।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ভয়ানক ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হব।

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দুর্গাপূজার পর কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব শুরু করতে প্রস্তুত তারা।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার যেকোনো পদক্ষেপ প্রতিহত করতে আমরা বিভিন্ন কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকব। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব’।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, সফল আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বিরোধী দলগুলোর সাথে বৈঠক করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ কিভাবে আমাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করা যায় এবং সম্ভাব্য কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়, তা নিয়ে আমরা বিরোধী দল ও জোটের সাথে আলোচনা করছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা আমাদের আন্দোলন জোরদার করার মাধ্যমে সরকারকে আমাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে সক্ষম হব।

সমমনা দলগুলোর পাশাপাশি তারা ইসলামী দলগুলোর সাথেও তাদের আন্দোলনে যোগ দিতে এবং তা সফল করতে আলোচনা করছে।

সূত্র : ইউএনবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *