চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের গতি আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ আগস্ট মাসে তার আগের মাসের চেয়ে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। আর প্রবাসী আয় কমার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে বাহরাইন। দেশটি থেকে এক মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ৫২ শতাংশ। তবে পরিমাণের দিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স কমেছে। এছাড়া ওমান, মালয়েশিয়া, কাতার ও সিঙ্গাপুর থেকে অস্বাভাবিক কমেছে রেমিট্যান্স। সে সঙ্গে অন্য শীর্ষ দেশগুলো থেকেও কমছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। গত বছরের জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী এতদিন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ১০২ টাকা পেতেন। এখন পাচ্ছেন ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। এছাড়া গত বছরের ২৩ মে যত খুশি তত রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ সহজ করে দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী এখন পাঁচ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। অন্যদিকে গত দেড় বছরে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারপরও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আশানুরূপ বাড়ছে না। এর মূল কারণ ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামে এখন বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ৮ টাকা। আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারের রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যাদের মাসিক আয় কম এবং যারা অবৈধ- তারা হুন্ডিতেই টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। তাছাড়া বৈধ পথের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ঝামেলায় হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো যায়। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া এটি আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে সাড়ে ২১ শতাংশ কম। গত জুলাইতে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। আর গত অর্থবছরের আগস্ট মাসে আসে রেকর্ড ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাইতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় এসেছিল ৩২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। আগস্টে তা কমে নেমে এসেছে ২৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় কমেছে ৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তারপরও প্রবাসী আয় প্রেরণে আগস্টেও দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে ইউএই।
গত আগস্টে ২৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে সৌদি আরব থেকে। আগের মাসে যা ছিল ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। ফলে সৌদি আরব থেকে এক মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। তারপরও দেশটি রেমিট্যান্স প্রেরণে আগস্টেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। গত মাসে যুক্তরাজ্য থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২১ কোটি ৭৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের মাসে ছিল ২২ কোটি ১২ লাখ ডলার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০ কোটি ডলার, যা গত মাসে কমে হয়েছে ১৭ কোটি ডলার। ফলে দেশটি থেকে এক মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মাসে ওমান, মালয়েশিয়া, কাতার ও বাহরাইন থেকেও অস্বাভাবিক কমেছে রেমিট্যান্স। যেমন- গত জুলাইতে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স আসে ১১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা গত মাসে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। ফলে দেশটি থেকে এক মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত মাসে ওমান থেকে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা গত জুলাইতেও ছিল ১২ কোটি ডলার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কাতার থেকে গত জুলাইতে রেমিট্যান্স আসে ১১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা গত আগস্টে কমে হয়েছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। ফলে এক মাসেই দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বাহরাইন থেকে গত মাসে রেমিট্যান্স আসে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা আগের মাসে ছিল ৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। ফলে দেশটি থেকে এক মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ৫২ দশমিক ৫২ শতাংশ। সিঙ্গাপুর থেকে গত জুলাইতে রেমিট্যান্স আসে ৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যা আগস্টে ৩৭ শতাংশ কমে হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এছাড়া ইতালি, ফ্রান্স, জর্দান, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালদ্বীপ, ব্রুনেই, ইরাক, লেবানন, সুইডেন, সাইপ্রাস ও বেলজিয়াম থেকেও কমেছে রেমিট্যান্স। তবে কুয়েত, মরিশাস ও গ্রিস থেকে গত আগস্টে বেড়েছে রেমিট্যান্স।