প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে হেরে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সুপার ফোরে খেলা পড়েছিল শঙ্কার মুখে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে সুপার ফোর নিশ্চিত করতে তাই বড় ব্যবধানে জিততে হতো টাইগারদের। সেটি সুন্দরভাবেই করল সাকিব আল হাসানের দল। ৮৯ রানের হারিয়ে জয়ের সঙ্গে সুপার ফোরে জায়গা নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ৩৩৫ রানের বড় সংগ্রহ তুলে সুপার ফোর নিশ্চিত করার রাস্তা সহজ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ-নাজমুল হাসান শান্তরা। লাহোরের এই ম্যাচে ৫৫ বা তার বেশি রানের ব্যবধানে জয় দরকার ছিল টাইগারদের। সেক্ষেত্রে আফগানদের আটকাতে হতো ২৭৯ রানের মধ্যে। সেটি সুন্দরভাবেই সম্পন্ন করলেন তাসকিন আহমেদ-শরিফুল ইসলামরা।
৩৩৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা আফগানদের শিবিরে এদিন দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন পেসার শরিফুল ইসলাম। ইনফর্ম আফগান ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজকে (১) এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তিনি। আর দলীয় ৭৯ রানের মাথায় ৩৩ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন রহমত। ১৩১ রানের মাথায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরান হাসান মাহমুদ। এরপরই জুটি বাধেন নাজিবুল্লাহ ও হাশমতউল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৬২ রানের জুটি। ১৯৩ রানে নাজিবুল্লাহর বিদায়ের পর ১৯৬ রানে থামেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ (৫১)।
এই দুজনের বিদায়ের পর আর কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি আফগান ব্যাটিং। ২২১ রান তুলতেই একে একে ফিরে যান গুলবাদিন নাইব, মোহাম্মদ নবী ও করিম জানাত। শেষদিকে রশিদ খান ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে (১৫ বলে ২৪) দাপট দেখালেও জয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে সেটি। শেষ পর্যন্ত ৩৩ বল বাকি থাকতেই ২৪৫ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা।
এদিন ম্যাচে আগুন ঝড়িয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা, বিশেষ করে শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু এনে দেয়া শরিফুলের বোলিং ফিগার ৯-১-৩৬-৩। শেষদিকে আফগান ব্যাটিং গুটানোর কাজ সারেন তাসকিন। ৮ ওভার ৩ বলে ৪৪ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। একটি করে উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
পাকিস্তানের লাহোরের উইকেট ব্যাটিংবান্ধব, সেটি বিবেচনা করে এদিন টস জিতে ব্যাটিং নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেন বাংলাদেশের ব্যাটাররাও। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষদিকে ঝোড়ো ব্যাটিং করেছেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব। তাতে আফগানিস্তানের সামনে ৩৩৫ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করায় টাইগাররা।
এশিয়া কাপে বাঁচামরার লড়াইয়ে এদিন প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝোড়ো শুরু পায় বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৭ ওভার ৫ বলেই পূরণ হয় দলীয় অর্ধশতক। প্রথম পাওয়ার প্লের একেবারে শেষ বলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ৬০ রানের মাথায় ৩২ বলে ২৮ রান করা মোহাম্মদ নাইমকে বোল্ড করেন স্পিনার মুজিব-উর-রহমান। ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি পেয়ে তিনে নামলেও সুবিধা করতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। পরের ওভারেই গুলবাদিন নাইবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোনো রান করার আগেই। এরপরই জুটি বাঁধেন শান্ত ও মেহেদী। ২৫৭ রানের মাথায় ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ। ততক্ষণে ১৯৪ রানের জুটি গড়া হয়ে গেছে দুজনের। এশিয়া কাপে জুটিতে সর্বোচ্চ রান এটিই। এর আগে ২০১০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬০ রানের জুটি গড়েছিলেন ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিকী।
উইকেটে বাঁহাতি শান্ত আছেন, সেই বিবেচনায় পরের ব্যাটার হিসেবে নামেন মুশফিক। এর পরপরই সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। একই ইনিংসে দুই বাংলাদেশি ক্রিকেটারের সেঞ্চুরি করার এটি মাত্র পঞ্চম ঘটনা। ১০১ বলে ৯ চার ও ২টি ছক্কায় সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তবে সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি শান্ত (১০৪)। ভারসাম্য হারিয়ে দলীয় ২৭৮ রানের মাথায় রান আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ঝোড়ো গতিতে ব্যাটিং শুরু করা মুশফিককেও শান্তর মতো ভাগ্য বরণ করেন। সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ফেরেন ১৫ বলে ২৫ রান করে। দলীয় ২৯৪ রানে মুশফিকের বিদায়ের পর ৩২৪ রানের মাথায় পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ফেরেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তিনিও রান আউটের শিকার। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রান তোলে বাংলাদেশ। সাকিব ১৮ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন।