সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চেলা নদীর অব্যাহত ভাঙনে এলাকার পাঁচটি গ্রামের আবাদি জমি, বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। গ্রাম পাঁচটি হলো- পূর্বচাইরগাঁও, সারপিন পাড়া, সোনাপুর, রহিমের পাড়া ও দৌলতপুর। সামান্য বৃষ্টি হলেই শুরু হয় ভাঙন, বিলিন হচ্ছে বসতঘর ও ফসলি জমি। নদী ভাঙনের কবল থেকে আত্মরক্ষায় বসতঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন নদীর পাড়ের মানুষজন।
রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, চেলা নদীর উত্তর পাড়ের সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া, সানুর আলী, মইনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দার বসতঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। মুহূর্তেই আজাদ মিয়ার একটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য ঘরটির মালামাল রক্ষায় ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
আজাদ মিয়া জানান, শুধু তিনিই নয় গত দুই দিনে সারপিন পাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নদী ভাঙনের কবল থেকে নিজেদের আত্মরক্ষায় বসতঘর নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছে।
দেখা গেছে, নরসিংপুর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চেলা নদীটি সারপিন পাড়া ও পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের মধ্য দিয়ে ঢুকে সোনাপুর, পূর্বচাইরগাঁও, রহিমের পাড়া ও দৌলতপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পূর্বচাইরগাঁও-সোনাপুর অংশে নদীটি বাঁক খেয়েছে। এই বাঁকে প্রবল স্রোতের ঘূর্ণনে গত কয়েক বছরে বর্ষায় পাঁচ গ্রামের কাঁচা সড়কের প্রায় ৫০০ গজ নদীতে বিলীন হয়। এতে অন্য এলাকার সাথে ওই পাঁচ গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এলাকাবাসী সড়কের ভেঙে যাওয়া অংশের পাশ দিয়ে পূর্বচাইরগাঁও-রহিমের পাড়া আবাদি জমির ওপর দিয়ে বিকল্প সরু একটি সড়ক দিয়ে কোনোমতে তাদের কৃষিপণ্য বাজারে পরিবহনের কাজ চালাচ্ছে।
পূর্বচাইরগাঁ গ্রামের শাহজাহান মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, তার দুই একর জমি ছিল। গত ২ বছরের মধ্যে দুই একর জমিই নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। গত বছরে নদীতে বিলিন হয়েছে তার শেষ সম্বল বসতবাড়িটি। বর্তমানে তিনি গ্রামের একজনের ভিটায় মাচা বেঁধে পরিবার নিয়ে থাকছেন।
তিনি আরো বলেন, নদীতে যদি বাঁধ না দেয়া হয় তাহলে পূর্বচাইরগাঁও গ্রামও থাকবে না।
সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘চেলা নদী শুধু বাড়িঘরই ভেঙে নিচ্ছে না, নদীটি আমাদের গিলে খাচ্ছে। এ পর্যন্ত পাঁচবার বসতবাড়ি সরাতে হয়েছে। জমিজমা সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের দেখার কেউ নেই। সরকারের এমপি, মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। নির্বাচন এলেই শুধু তাদের দেখা মেলে।’
রহিমের পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ফয়েজ উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও চেলা নদীর পাড়ের মানুষের জীবন মানের কথা কেউ চিন্তা করেনি। এখন এই পাঁচটি গ্রাম রক্ষায় চেলা নদীতে বাঁধ দেয়া হোক। এত বছর চেলার পাড়ের বাসিন্দারা কোনো উন্নয়ন দেখেনি বা উন্নয়নের কথা বলতে পারেনি বলে জানান তিনি। তাই জরুরি ভিত্তিতে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাঁধসহ গ্রামীণ সড়কটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আম্বিয়া আহমদ বলেন, নদীভাঙনকবলিত সড়কটিসহ সেখানকার ছোট-বড় সড়কগুলো মেরামতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা যদি আমাদেরকে অবগত করেন তাহলে টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন করে বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেয়া হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভির আশরাফী চৌধুরী বলেন, শুধু চেলা নদীর পাড়ই নয়, উপজেলার সুরমা, চেলা, খাসিয়ামারা নদীর পাড়ের মানুষ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে দিনদিন নিঃস্ব হচ্ছেন। বড় কোনো প্রকল্প না পাওয়ায় কিছু করা সম্ভব হচ্ছনা।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-২) মো: শামসুদ্দোহা বলেন, ‘চেলা নদী পাহাড়িয়া নদী হওয়ায় পানির তীব্র শ্রোতের কারণে আশপাশের গ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চেলা নদী ভাঙ্গনে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বড় ধরনের প্রকল্প প্রয়োজন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি (ডিও ‘লেটার) দেন তাহলে বড় ধরনের প্রকল্প পাওয়া যাবে। বড় প্রকল্প পেলে জনপ্রতিনিধিরা একটু আন্তরিক হলে কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।