আমদানি বাণিজ্যের সাতাশ শতাংশই আসে চীন থেকে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


দ্রুতগতিতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট আমদানিপণ্যের ২৭ দশমিক ২৮ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। তবে বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নের কারণে চীন থেকে আমদানি বেড়েছে। আর রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে না পারায় দেশটিতে রপ্তানি কমে যাচ্ছে।

পণ্য আমদানির উৎস হিসেবে এক সময় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রথম পছন্দের দেশ ছিল ভারত। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশের বাজারে চীনা পণ্যের দাপট শুরু হয়। এখনো তা বজায় আছে। পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রথম পছন্দের দেশ চীন। আর ভারত চলে গেছে দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষ দশ আমদানির উৎস দেশের বাকি দেশগুলো হলো সিঙ্গাপুর, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও অনেক পণ্য আমদানি হয়।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রধানত প্রাথমিক পণ্য, শিল্পজাত পণ্য ও মূলধনী যন্ত্রপাতি- এ তিন শ্রেণিতে বেশি পণ্য আমদানি করে। প্রাথমিক পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, গম, তৈলবীজ, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও কাঁচা তুলা। আর শিল্পজাত পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, সার, ক্লিঙ্কার, স্টেপল ফাইবার ও সুতা।

চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি করা পণ্যের মধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি বেশি। পোশাক তৈরির বেশির ভাগ কাঁচামালও আসে চীন থেকে। এ ছাড়া বয়লার, তুলা, ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, সুতা, লৌহ, ইস্পাত ইত্যাদি পণ্যও দেশটি থেকে আমদানি করা হয়।

ডলার সংকট কাটাতে সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে চীনা মুদ্রায় সীমিত পরিসরে লেনদেন শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্তে চীনা মুদ্রায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে গত ৩৪ বছরের আমদানি পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশে ১০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আসে। ওই অর্থবছরে ১১ কোটি ডলারের পণ্য আসে চীন থেকে। এর পর থেকে টানা ২০০৪-০৫ অর্থবছর পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি চীনের তুলনায় বেশি ছিল।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ভারতকে ছাড়িয়ে যায় চীন। ওই অর্থবছরে ১৮৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য ভারত থেকে আমদানি হলেও চীন থেকে আসে প্রায় ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য। পরের ২০০৬-০৭ অর্থবছরেও চীন ছিল প্রথম, ভারত দ্বিতীয়। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চীনের বদলে ভারত আবার বাংলাদেশের বাজারে প্রথম অবস্থান দখল করে।

কিন্তু ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে পরিস্থিতি আবার পাল্টে যায়। ওই বছরের পর থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারত আর কখনই চীনকে টপকাতে পারেনি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানি দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯১৬ কোটি ডলারে। অথচ ঠিক আগের অর্থবছরে মোট আমদানি হয়েছিল ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলারের পণ্য।

বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সেক্রেটারি জেনারেল আল মামুন মৃধা গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য কম দামে ভালো মানের পণ্য তৈরি করে চীন। গত ১৫-২০ বছরে ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে গেছে বাংলাদেশ। ফলে চীন যে পণ্য আমদানির প্রথম উৎসস্থল হবে, এটা খুবই স্বাভাবিক।

এই ব্যবসায়ী নেতা মনে করেন চীনা মুদ্রায় লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, যে কেনো ভারী শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য শিল্পের কাঁচামালের জন্য চীনের বিকল্প এ সময় তেমন কেউ নেই। ফলে সেখান থেকে আমদানি বাড়ছে। তবে দেশটিতে রপ্তানি বাড়াতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *