আওয়ামী লীগের নির্বাচনী দায়িত্বে সাবেক ৩ আমলা

Slider বাংলার মুখোমুখি


আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় এতদিন সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন এইচটি ইমাম। তার মৃত্যুর পর এখন কার কাঁধে এ দায়িত্ব পড়বে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগে নানা ধরনের আলোচনা রয়েছে। তবে দলটির একাধিক সূত্র বলছে, সমন্বয়কের দায়িত্ব পেতে পারেন তিন আমলা- সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার।

দলকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে চলতি বছরের শুরু থেকে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় ডিজিটাল কক্ষ উদ্বোধন করে তৃণমূল ও কেন্দ্রের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার। সাবেক এই আমলা গত ৫ জানুয়ারি থেকে ধানমন্ডিতে দলের সাবেক নির্বাচনী সমন্বয়ক এইচটি ইমামের কক্ষে বসে কাজ করছেন। অন্যদিকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবনে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আবুল কালাম আজাদ ও ড. মোহাম্মদ সাদিককে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন, এই তিনজনকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নানা জায়গায় রাখা হতে পারে।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হওয়ার কথা। এতে সুনির্দিষ্ট ৯টি এজেন্ডার পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বিষয়েও আলোচনা অথবা সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন কোনো কোনো নেতা।

ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘তিনজন নানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তারা প্রশাসনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। তাদের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আনার আলোচনা আছে।’

জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত বসা শুরু করেন কবির বিন আনোয়ার। ওই দিন সেখানে এলে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকে

জেলা-উপজেলার নেতারা কবির বিন আনোয়ারকে নিয়মিত ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন।

গত ৫ জানুয়ারি তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে এ বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। দলে কী দায়িত্ব পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি তার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে যাব।’ নির্বাচনী সমন্বয়কারী হতে যাচ্ছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘চাঁদ উঠলে সবাই দেখতে পারবেন।’ এরপর থেকে তিনি দলের পক্ষ হয়ে নানা কাজ করছেন, তবে তার পদের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি।

অন্যদিকে গত ৭ আগস্ট তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে যান ওবায়দুল কাদের। ওইদিন তার সঙ্গে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ ও ড. মোহাম্মদ সাদিক। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগসহ দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জন্য কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব কক্ষে বসবেন আবুল কালাম আজাদ ও ড. মোহাম্মদ সাদিক।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম আমাদের সময়কে জানান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনের নিচতলায় দলের নির্বাচনী অফিস করা হচ্ছে। আবুল কালাম আজাদ ও ড. মোহাম্মদ সাদিকের জন্য কক্ষ বরাদ্দ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তাদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ হয়েছে।’ কে কোন পদে আসবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নেত্রী (শেখ হাসিনা) ঠিক করবেন। এখানে উনাদের বসার জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখান থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব; বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বায়োডাইভারসিটি বিষয়ক গ্লোবাল কমিশনের কমিশনারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বে অপরিসীম অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাপান সরকার কর্তৃক জাপানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক ‘অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান, গোল্ড অ্যান্ড সিলভার স্টার’ লাভ করেন।

ড. মোহাম্মদ সাদিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক এবং সুইডেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবেও। কবিতা ও গবেষণাতেও সময় দেন তিনি। স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেছেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাগরী ভাষা ও লিপির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বলা হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় যারা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন, মোহাম্মদ সাদিক তাদের একজন।

কবির বিন আনোয়ার সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে অবসরে যান। এর আগে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন (মায়ের নামে, অলাভজনক সংস্থা) ছিলেন। লেখালেখি, গবেষণা ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও বিচরণ আছে তার। ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *