মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি ঃ বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ছুঁই ছুঁই করছে। গত শনিবার, ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে, ভিটেমাটি ছাড়ছেন এলাকাবাসী, ১০০ মিটারের মধ্যে হুমকিতে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়।বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় যমুনার পানির উচ্চতা ছিল ১৫.৮৪ মিটার। গত শনিবার, ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় পানির উচ্চতা ১৬.১৬ মিটার। অর্থাৎ গত ২৪ ঘন্টায় পানি ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। ফলে পানি বিপদসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এ উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ধারাবর্ষা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে।গত ১৫ দিনে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ১০০টির বেশি পরিবারের বাড়িঘর ও এলাকা ছাড়া হয়েছেন। যমুনার ভাঙনে হারিয়েছেন তাদের ভিটেমাটি। গত কয়েকদিন আগেই বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন আব্দুর রশিদ খান, রফিকুল খান, মোতালেব খান, খলিল খানসহ এ বংশের ৫০টি পরিবারের লোকজন। ভাঙন এলাকার নদী তীরের ৫০ মিটারের মধ্যে বসবাস করছেন প্রায় ১৫টি পরিবারের লোকজন।এ পর্যন্ত প্রায় ১২শ’ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে যমুনায়। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে এ গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধারাবর্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি ভাঙন এলাকার মূল তীর হতে মাত্র ১০০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। সেখানে চলছে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ।উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এ গ্রামের লোকসংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ১৩টি মসজিদ এবং বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।হুমকিতে রয়েছে এ উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ধারাবর্ষা ফরেস্ট বাগান। যেখানে এক হাজার হেক্টর জমিতে সরকারের রয়েছে কয়েক কোটি টাকার মেহগনি গাছ। যেখানে প্রতিবছর হাজারো দর্শনার্থীরা আসেন বনভোজন করতে।কথা হয়, এ গ্রামের নদীতীরের ১০ গজের মধ্যে বসবাসরত মৃত ইসমাইল আকন্দের ছেলে হাতেম আকন্দের সাথে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদী ভাঙছে। এ পর্যন্ত ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি নিজ হাতে অন্যত্র রেখে এসেছি। নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন আমার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। এখন মনে হচ্ছে আমার পালা।দু’একদিনের মধ্যেই ৩০ বছরের এই বসতি ছেড়ে আমি অন্যত্র চলে যাব। কোথায় যাব তা এখনো ঠিক করতে পারিনি। এ জীবনে প্রায় ১৬ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। সরকার যদি অতিদ্রুত ভাঙন এলাকায় কাজ করে দিত, তাহলে মনে হয় এতদিনের বসতবাড়ি আমার রক্ষা পেত। সেইসাথে রক্ষা পেত ঐতিহ্যবাহী এ গ্রামের হাজারো পরিবার। এদিকে নদী ভাঙনের শব্দে এবং আতঙ্কিত হয়ে সারারাত আমাদের জেগে থাকতে হয়।
সংশ্লিষ্ট বোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই আমার ইউনিয়নের ধারাবর্ষা এবং বোহাইল চরে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এলাকাবাসী ভিটেমাটি ছাড়ছেন। এভাবে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে এ ঐতিহ্যবাহী গ্রামের ১৫ হাজার লোকজন বাস্তুচ্যুত হবেন এবং এখানে সরকারের শত কোটি টাকার গাছ যমুনাগর্ভে বিলীন হবে।সারিয়াকান্দি উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক বলেন, অতিদ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, যেহেতু উত্তরে পানি কমার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
তাই সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি দু’একদিন বৃদ্ধি পেয়ে আবারো কমতে শুরু করবে। বোহাইল ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকাটি খুব শিগগিরই পরিদর্শন করে সেখানে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।