‘খুব বেশি মন খারাপ হলে আকাশের দিকে তাকান’

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

দেশবাসীকে অবাক করে দিয়ে গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তামিম ইকবাল। তারকা এই ওপেনারের আচমকা এমন সিদ্ধান্তে হতবাক সবাই। এরপর তামিম ইকবালকে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তামিম।

গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তামিমের ইস্যু নিয়ে এমনই তোলপাড় ছিল। অবশেষে সব সমাধান হলো। তবে অবসর থেকে ফিরলেও চলমান আফগানিস্তান সিরিজের বাকি ২ ম্যাচে খেলছেন না তামিম। আপাতত দেড় মাসের বিশ্রামে থাকবেন তিনি। এশিয়া কাপ দিয়ে আবারও দলে ফিরবেন তিনি।

তামিমের অবসরের ঘোষণায় তার ভক্তরাও ব্যাপক হতাশ হয়েছিলেন। কেউ তো রাস্তায় কেঁদে বিলাপ করেছেন। আবার অনেকে মানববন্ধনেও নেমে পড়েছিলেন। তবে এই মহলেও এখন স্বস্তির নিঃস্বাস।

এদিকে মহ’তামিম’ নামে এক তামিম ভক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশসেরা ওপেনারকে নিয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। রঙমিস্ত্রী নামে একটি পেজে তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করে স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন। যেখানে ভিডিওতে দেখা যায়, ৮৯৬টি রুবি কিউব দিয়ে তামিম ইকবালের মুখের অবয়ব তৈরি করেছেন। পরে এই ভক্তের পোস্ট তামিম ইকবাল নিজে শেয়ার দিয়েছেন।

পোস্টে তিনি তামিমকে নিয়ে লিখেছেন, প্রিয় Tamim Iqbal,

জানেন আপনাকে নিয়ে না বিশাল বড় ধরনের একটা ফ্লেক্স করি। আমার নিজের নামের অর্ধেক জুড়েই তো আছেন আপনি। ছোটকালে যখন প্রথম ফেসবুক খুলি, তখন নিজের নামের শেষে ‘ইকবাল’ জুড়ে দিয়েছিলাম। যদিও এখন এগুলো ভাবলে নিজের অজান্তেই হাসি পায়।

সেবার যখন আপনি পোর্ট অফ স্পেইনে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে লং অন এর উপর দিয়ে জহির খানের বলে ছক্কা হাঁকালেন, বিশপের সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজে, “It belies a 17 year old who is showing very little respect to the elder statesman.”

আপনাকে ভালো লাগা সেখান থেকেই শুরু। সবাই জানে আমি সাকিব আল হাসানের বিশাল ফ্যান, তবে খুব কম মানুষই জানে আপনাকে কি পরিমাণ পছন্দ আমার।

২০১২ সালের এশিয়া কাপে প্রথম কেঁদেছিলাম ক্রিকেটের জন্য। জানা ছিল না যে খেলার জন্যও কান্না পায় মানুষের। ছোট ছিলাম তো, বুঝে উঠতে পারিনি হয়তো। আপনার চার আঙুল দিয়ে চার ম্যাচের চারটি অর্ধশতকের সেলিব্রেশনের কথা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

২০১৪ সালে প্রথম আপনাকে স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে, দিনটা ছিলো ২৮ নভেম্বর। আপনি সেদিন ১৬ রানের একটি ছোট্ট ইনিংস খেলেছিলেন। তবে সেটা আড়াল হয়ে গিয়েছে আপনাকে প্রথমবার সামনে থেকে দেখার আনন্দে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে আপনার দ্বিশতকের উদযাপনটাও মনে ধরে থাকবে চিরকাল।

খেলা দেখতে বসলে ভয় হতো যদি আপনি আউট হয়ে যান তাহলে রান করবে কে! বছরের পর বছর আপনি ওপেনিং পজিশনটাকে আগলে ধরে রেখেছেন তার জন্য আপনার প্রতি অসংখ্য ভালোবাসা।

যেই তামিমের নাম শুনলে ভয়ানক ও আক্রমণাত্মক এক ব্যাটারের কথা মনে আসতো সবার, তাকে সবাই আজ ডটবাবা বলে। খারাপ লাগে নিজেরও, কষ্টে আমিও তাল দেই তাদের সাথে। আড়ালে গিয়ে আবার কাঁদি আপনার জন্য।

গতকাল ঘুম থেকে উঠে আপনার অবসরের খবর শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। কি থেকে কি হয়ে গেল নিজেও বুঝে উঠতে পারিনি। তবে আল্লাহর রহমত, যে আপনি আবার ফিরবেন।

প্রিয় তামিম, জানি আপনার মন হয়তো আমাদের মতোই খারাপ এখন। যদি খুব বেশি মন খারাপ হয়, আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশের বিশালতা দেখে নিয়েন, তারপর বুক ভরে তাজা বাতাসে শ্বাস নিয়েন। হতাশ হয়েন না, আবার প্র‍্যাকটিস শুরু করেন, টিমে যে আবার ফিরতে হবে, দলকে নেতৃত্ব দিতে হবে। আপনি না এক হাতে ব্যাট নিয়ে লড়া ক্রিকেট যোদ্ধা? এভাবে ছেড়ে দিলে হবে বলেন? অভিষেক আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে অর্ধশতাধিক রান করে যেমন সেবার সবাইকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি চাই আরেকবার আপনার জাতীয় দলে অভিষেক হোক।

সারা বিশ্ব দেখুক, অসাধারণ কামব্যাকের গল্পটা তামিমরাই লিখতে জানেন।

ইতি

আপনার ক্ষুদ্র ভক্ত

মহ’তামিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *