আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে সরকার গ্রেপ্তার-নির্যাতন করছে বলে মনে করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ বুধবার গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হীন উদ্দেশে এই অবৈধ সরকারের এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, আহত ও হত্যা করা হচ্ছে। সভায় আওয়ামী সন্ত্রাস, পুলিশের নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্থায়ী কমিটির সভায় সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সিরিয়ায় গুম বা নিখোঁজ ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি কী হয়েছে, তা জানতে একটি নিরপেক্ষ মেকানিজিম বা বডি গঠন করার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে পাস হয়। বাংলাদেশের এই ভোটদানে বিরত থাকা মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী। বাংলাদেশ জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হলেও এই বিষয়ে ভোটদানে বিরত থাকা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে গুরুতর অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠেছে, তা মিথ্যা নয়। সভায় এই অবৈধ সরকারের সকল প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের যে সংশোধনী আনা হয়েছে, সভায় বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গণবিরোধী এবং সুশাসনবিরোধী বলে অভিহিত করা হয়। সভা মনে করে, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্য চালিয়ে ব্যাংকিং খাতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সরকার দুর্নীতির লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপির জন্য কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদের সকল প্রকার সুবিধা দিয়েই চলেছে। পূণঃতফশিলকৃত ঋণ, অবলোপন করা ঋণ, অর্থ ঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল পরিমাণ অঙ্কের ঋণ বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করাসহ আরও অনেক ঋণ যেগুলো খেলাপিযোগ্য, সেগুলো খেলাপি ঋণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে সরকারি হিসাবমতে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। কিন্তু উপরোক্ত ঋণগুলোকে তালিকাভুক্ত না করায় প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের মতে, এর প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারঘণিষ্ঠ অলিগার্কদের খেলাপি ঋণ বারবার পূণঃতফশিল ও অবলোপন করে তা গোপন করা হয়। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পরোক্ষ ও প্রত্যোক্ষভাবে জনগণের আমানতের টাকা বিদেশে পাচারের ব্যবস্থা করছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল। ব্যাংকিং খাতকে এই সরকার সচেতনভাবে ধ্বংস করছে। সভায় অবিলম্বে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে যে আইন করা হয়েছে, তা বাতিলের দাবি জানায়।
সম্প্রতি সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের চক্রান্তে কাঁচা মরিচের মূল্য কেজিপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা, অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার মূল্য নিম্নমুখী হওয়ায় সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার মূল্য পরিকল্পিতভাবে হ্রাস করায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে এতিমখানাগুলো তাদের প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করা হয় এবং অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।