ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় জ্বালানি খাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসকে (এলএনজি) গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কাতার এবং ওমানের সঙ্গে চুক্তির পর স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে জোর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দেওয়া হয়েছে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের নতুন কাজ।
শতভাগ জ্বালানি আমদানির দিকে ঝুঁকেছে দেশ। জ্বালানি খাতে সরকারের নীতি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকার্বন ইউনিট দেশের প্রধান জ্বালানি গ্যাসের চাহিদা এবং সরবরাহের প্রক্ষেপণে এমন চিত্রই তুলে ধরেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে কোনও সংকট সৃষ্টি হবে না।
হাইড্রোকার্বন ইউনিট বলছে, ২০৩০ সালে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা বেড়ে হবে ৪ হাজার ৬২২ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে একই সময়ের মধ্যে আবার দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে— যা শঙ্কার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সংস্থান কী করে সম্ভব— এটি সবার জন্যই দুশ্চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন তারা।
হাইড্রোকার্বন ইউনিট এক প্রতিবেদনে বলছে, এখন দেশের অবশিষ্ট গ্যাসের মজুত রয়েছে ৯.৭৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। প্রতি মাসে গড়ে ০.০৭ সিটিএফ গ্যাস তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ দেশীয় গ্যাসের মজুতে আর ১৩৯ মাস বা ১১ বছর চলবে। কিন্তু খনির গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে আসলে সেখান থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে আসে।
হাইড্রোকার্বন ইউনিট অপর এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২৩ সালে দেশে গড়ে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে এখন সরবরাহ রয়েছে দৈনিক দুই হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন। এই চাহিদা ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩০ নাগাদ দাঁড়াবে দৈনিক ৪ হাজার ৬২২ মিলিয়ন ঘনফুট।
এই চাহিদা সামাল দিতে সরকার আগেভাগেই উদ্যোগ নিয়েছে। গত মাসেই দুটি চুক্তি হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী এলএনজি সরবরাহে কাতার এবং ওমানের সঙ্গ চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ১৫ বছরের এলএনজির সংস্থান হয়েছে। এর বাইরে অন্য নতুন কোম্পানির সঙ্গে এলএনজি আমদানি চুক্তি করতে চাইছে সরকার।
এলএনজি আমদানির দায়িত্বে থাকা সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (আরপিজিসিএল) একজন কর্মকর্তা জানান, আমাদের সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করছেন। তারা এলএনজি বিক্রিতে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি করতে চাইছেন। এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
গত ১ জুন কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার এনার্জির সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সাল থেকে পরবর্তী ১৫ বছর বার্ষিক ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন এলএনজি বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে কাতার।
এছাড়া গত ১৯ জুন ওমানের সঙ্গে আরও একটি এলএনজি সরবরাহ চুক্তি করে ঢাকা। এই চুক্তিতে বছরে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন এলএনজি দেবে দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড। যদিও দুই দেশের সরকারের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি হওয়াতে এটিকে জি টু জি চুক্তি বলছে পেট্রোবাংলা। একই মাসে (১৪ জুন) সামিট গ্রুপকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পরে এমন একটি টার্মিনাল নির্মাণ করতে দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি।
জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ গ্যাস অনুসন্ধান কাজ জোরদার করেছে। গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য পিএসসিকে হালনাগাদ করা হচ্ছে।