দীর্ঘ ৩২ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন দেশের বহুল আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। আজ রোববার বেলা ১১টা ৪৬ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। দেশের বিভিন্ন কারাগারে ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি। হত্যা ও অস্ত্র মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয়েছিল। ফাঁসি কার্যকর ও অন্যান্য কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে করা হয় ৩২ বছর।
কারাভোগ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শাহজাহান ভূঁইয়া। এ সময় তিনি বলেন, প্রতিটি ফাঁসিতেই কিছু না কিছু আবেগ তাড়িত বিষয় থাকে। কারণ আমার হাতে একজন লোক চলে যাচ্ছে। তাকে দেখা বা তার ফাঁসি দেয়া অনেক কষ্টের। আমার সঙ্গে আরও ৬ জন কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিটা ফাঁসিতেই একটা আবেগ থাকে। কারণ মানুষ যত অপরাধই করুক না কেন, যখন সে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়, তখন সবারই একটু না একটু মায়া লাগে। সে মায়াটা না হয় আমি করলাম কিন্তু কোর্ট তো করবে না, আইন তো তাকে ক্ষমা করবে না।
বহু হত্যাকাণ্ডের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া এরশাদ শিকদার ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইকে ফাঁসিতে ঝোলান জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। কীভাবে এরশাদ শিকদার ও বাংলা ভাইকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় এবং তাদের শেষ ইচ্ছা কী ছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, এরশাদ শিকদারকে ফাঁসি দেওয়ার আগে তিনি দাঁড়িয়ে একটা কথা বলেছিল, ‘আমার জীবনে আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার জন্য দোয়া করবেন।’
বাংলা ভাইয়ের শেষ ইচ্ছা কী ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মরার পরে যেন আমার ছবিটা না উঠানো হয়।’
কারাফটকের সামনে শাহাজাহান ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে। আমার এক বোন আছে। তাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু ফোনে কথা হয়েছে। সে আমাকে কোনো দিন দেখতেও আসেনি।’
শাহজাহান ভূঁইয়া যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছেন তারা হলেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জেএমবির দুই জঙ্গি।
৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ভূঁইয়ার জন্ম ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নথি অনুসারে, ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। এ ছাড়া উভয় রায়ে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। অস্ত্র ও হত্যা মামলায় ৪২ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত শাহজাহানের সাজা কমে ৩২ বছর হয়।