প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পেরিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পায়নি নগরবাসী। সামান্য বৃষ্টিতে জলে বন্দি হওয়া বর্ষাকালের নিয়মিত ঘটনা। এই সময়ের মধ্যে চারটি সিটি নির্বাচনে দুই বার করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যয় হয়েছে শত শত কোটি টাকা, তবে দুর্ভোগ দূর না হয়ে, বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। আগামী ২১ জুন সিটির পঞ্চম নির্বাচন। সিটি নির্বাচনের আগে আবারো আলোচনায় নগরীর জলাবদ্ধতা। বর্তমান ও সাবেক মেয়রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় মুখর নতুন প্রার্থীরা।
বুধবার সকালে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা। সিটির বর্ধিত এলাকা ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এর প্রতিবাদে সিলেট-বাদাঘাট সড়ক অবরোধ করে। তাদের সাথে কয়েক ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয় পাশের সদর উপজেলার সোনাতলা গ্রামের মানুষের। আহত হন অর্ধশত লোক। পুলিশ এ ঘটনায় ৬০০ জনের নামে মামলা করেছে। তবে কেউ গ্রেপ্তার হননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জলাবদ্ধতা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব নিরসনে সোনাতলায় যান সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দ্রুত কাজের মাধ্যমে দুই এলাকারই জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিল বিপুল পরিমাণ পুলিশ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টুকেরবাজার-বাধাঘাট চারলেনের সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মইয়ারচরে বৃষ্টির পানি আটকে ছিল। সড়কের পাশের খাল খনন শেষ না হলে এই জলাবদ্ধতা সহজে কাটবে না।
বুধবারের বৃষ্টি অব্যাহত ছিল বৃহস্পতিবারও। তবে বৃষ্টিপাতের মাত্রা কম হওয়ায় নতুন কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। নিচু এলাকাগুলো থেকে বৃহস্পতিবারও নেমে যায়নি বৃষ্টির পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে আগামী ১৫ দিন।
বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আগামী ১৫ দিন সিলেটজুড়ে অতিবৃষ্টি হবে। এই কদিনে ১৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই।
বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা। এমন অবস্থায় আবার বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ২৭১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিলেটে ভারী বৃষ্টির কারণে সাময়িক পানি জমেছে। তবে নালা-নর্দমাগুলো পরিষ্কার করে পানি নামার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা বেশি সময় স্থায়ী হচ্ছে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দশ বছরে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে সিলেট নগরীর প্রায় সব ড্রেন। অপরিকল্পিত এসব ড্রেনে এখন আবার শুরু হয়েছে জোড়াতালি সংস্কার। এ দিয়ে জলাবদ্ধতা দূর হবে না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদের মতে, সিলেট পাহাড়ি এলাকা হওয়ার এর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভিন্ন হওয়ার কথা। পুরো সিস্টেমটাকে নিয়েই নতুন করে ভাবা উচিত। তা না হলে টাকা খরচ হবে তবে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকেই যাবে।