বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রেখেছেন। এখনো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসনে রাখা হয়েছে। আমাদের এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যাদের নামে মিথ্যা মামলা নেই। আজকে ৪০ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। কারণ তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ১০টি আসনও পাবে না।
‘অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি’র প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং দেশের সব বিভাগে পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে দলটি। তারই অংশ হিসেবে বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগের সাদেক হোসেন খোকা রোড থেকে শুরু হয়ে দোলাইপাড় পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি।
এ ছাড়া একই ইস্যুতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে নাবিস্কো সাতরাস্তা মোড়, হাতিরঝিল মোড় ও এফডিসি হয়ে সোনারগাঁও হোটেল সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ‘পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী আবুল বাশার, শিরিন সুলতানা, হাসান মামুন, মহানগর বিএনপির নবীউল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, লিটন মাহমুদ, তানভীর আহমেদ রবিন, আরিফা সুলাতানা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপন, অঙ্গসংগঠনের সাদেক আহমদ খান, হাসান জাফির তুহিন, ইসহাক সরকারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে লোডশেডিং হয়। কেন? কদিন আগেও তো তারা (সরকার) সংসদে বলল যে, বিদ্যুৎ নাকি এমন উৎপাদন হয়েছে যে, ফেরি করে বিক্রি করতে হবে। হাতিরঝিলে উৎসব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কোথায়? আসলে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে- বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে জনগণের পকেট কাটা। কিন্তু এবার সময় এসেছে আসল পকেটমারের পকেট কাটার। এরা সবকিছুতেই জনগণের পকেট কাটে। মোবাইল থেকে ৩০ শতাংশ টাকা কাটছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে ১ হাজার টাকা রিচার্জ করলে ৩০০ টাকা নেই। ওটা কোথায় যায়? ওটা যায় হাসিনার ঘরে। আজকে ১০ জন মানুষের হাতে দেশের বিদ্যুৎ খাত জিম্মি। বেশিরভাগই বিদেশে টাকা পাচার করেছে। এক বছরে ৭৮ হাজার কোটি টাকা সারচার্জ দিতে হয়। এসব তো আমাদের জনগণের টাকা। অবিলম্বে চাল, ডাল, তেলের দাম কমানো ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জনগণের দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু এই সরকার ক্ষমতায় এসে সেটাকে বাতিল করে দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওবায়দুল কাদের আপনারা গদি ও পুলিশ ছেড়ে মাঠে আসেন। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দেখবেন কার কত শক্তি? নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। আজকে গোটা বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সরকার বলছে, কয়লা ও গ্যাস নেই। কেন? জনগণ তো বিল ঠিকই দিয়েছে। ওরা বেশিরভাগ টাকা তো আমেরিকাতেই জমা রেখেছিল। আমেরিকা নতুনভাবে ভিসানীতি দেওয়ার পরই একটি আইন করা হয়েছে যে, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনলে আড়াই শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়া হবে। অর্থাৎ চুরি করলে বাড়তি পুরস্কার দেওয়ার সুযোগ। এই যদি হয় সরকার। যারা ডাকাতি করে তাদের বলে- ডাকাতি কর পুরস্কার পাবি। এরা কেমন সরকার! এই সরকার উন্নয়নের মরীচিকার এমন স্বপ্ন দেখিয়েছিল সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। উন্নয়নের রোল মডেল এখন মাথাব্যথার কারণ। তবুও কিন্তু তাদের মুখ থেমে নেই। গলাবাজি ঠিকই আছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারে না। সিটি নির্বাচনে আবারও তা প্রমাণিত হলো। বরিশালে মেয়র প্রার্থীকে তারা পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছে- ‘কেন তিনি কি মারা গেছেন?’ আর এই সররকার বলছে সুষ্ঠু নির্বাচন দিবে! আমরা বহুবার দেখেছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তারা মানুষের অধিকার হরণ করে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা নির্বাচন করেছে। নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিরাজুল আলম খান ছিলেন ক্ষণজন্মা। তাকেও সরকার শেষ সম্মানটুকু দেয়নি। কারণ এই সরকার স্বাধীনতার পর যখন বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল তখনই সিরাজুল আলম খান বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে, ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে ক্ষমতায় টিকে আছে।
এ সময় অবিভক্ত ঢাকা সিটির মেয়র ও দলের সাবেক নেতা মরহুম সাদেক হোসেন খোকার নামও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং দক্ষিণের বিএনপির যেসব নেতা কারাবন্দি আছেন তাদের দ্রুত মুক্তি দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব।