প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ মানুষ, অপেক্ষা বর্ষার

Slider সারাদেশ


কমছেই না অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরম। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবন। বর্ষা না আসা পর্যন্ত আবহাওয়া এমনই থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

সপ্তাহখানেক ধরে দেশের কোথাও বৃষ্টি নেই। ফলে তাপপ্রবাহ বেড়েই চলেছে। মৌসুমি বায়ু আসার অপেক্ষায় দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি। ফলে তাপমাত্রার পরিমাণ যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি তাপ অনুভূত হচ্ছে মানুষের কাছে।

এদিকে প্রচণ্ড গরমে রাজধানীতে একদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে, অপরদিকে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট।

রিকশাওয়ালা, শ্রমজীবী মানুষ, বাস ড্রাইভার, হেলপার, হকাররা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছেন। বাংলামটরে বাসের হেলপার রফিক জানান, গরমে বাসে কাজ করাই খুব কঠিন। একদিকে বাইরের গরমে, আরেক দিকে ইঞ্জিনের গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। গরমে ঘেমে বারবার শরীর ভিজে যায়। এখন বৃষ্টি হলেই বেঁচে যাই।

রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে কথা হয় রিকশাচালক কুদ্দুসের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই গরমে দুপুরের পর আর রিকশা চালাতে পারি না। কোথাও ছায়ায় গিয়ে বসে থাকি। রোদ কমলে আবার বের হই। আয় কমে যায় এতে। কিন্তু গরমে আর পারছি না।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বসা রেডিমেট পোশাকের হকার আনসারি বলেন, ‘গরমের কারণে দিনের বেলা লোকজন আসা কমে গেছে। নিজেরা বসে বসে ঘামি। কেনাবেচা অনেক কমে গেছে। কবে যে বৃষ্টি হবে, সেই অপেক্ষায় আছি।’

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় ৩৬ দশমিক ৭, রংপুরে ৩৭ দশমিক ৪, ময়মনসিংহে ৩৬ দশমিক ৫, সিলেটে ৩৪ দশমিক ৬, চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ৩, খুলনায় ৩৮ এবং বরিশালে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়— খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

রাজশাহী, দিনাজপুর, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগসহ রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু এখনও বাংলাদেশ উপকূল থেকে অনেক দূরে আছে। টেকনাফের উপকূলে আসতে পারে ৭ বা ৮ জুনের দিকে। এরপর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের দিকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় আস্তে আস্তে দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এই বৃষ্টি।’ তিনি বলেন, ‘এই মৌসুমি বায়ু আসার আগের সময়ে আবহাওয়া এমনই থাকে। বাতাসে আদ্রতা বেশি হওয়ায় প্রকৃত তাপমাত্রা যা, মানুষ তারচেয়ে বেশি অনুভব করছে। ঘাম হচ্ছে অতিরিক্ত। ফলে ভোগান্তিও বেশি। এই তাপপ্রবাহ আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *