প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কোনো দিক নির্দেশনা নেই বলে এক বিবৃতি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। আজ বৃহস্পতিবার গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলের এক যৌথ বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনজীবন এক ভয়াবহ সংকটকাল অতিক্রম করছে। সামনে এই সংকট আরও প্রবল হবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন। অথচ বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাজেটে আসন্ন সংকট মোকাবেলার কোনো চিন্তা অনুপস্থিত। মূল্যস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষ যখন দিশেহারা তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে কৃষিতে বিশেষ ভর্তুকি কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় কমানোর কোনো কার্যকর পরিকল্পনা নেই বাজেটে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একদিকে সরকার কৃচ্ছতাসাধনের কথা বলছে অন্যদিকে স্বল্প প্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ অব্যাহত রাখছে। দেশি ও বিদেশি ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়ছে। সরকারের ঋণ করে ঘি খাওয়ার নীতি অব্যাহত আছে। অর্থাৎ আয় কিভাবে হবে তার সুনির্দিষ্ট বিবেচনা ছাড়াই বিপুল অংকের ব্যয়কে নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চালু বিদ্যুৎপ্রকল্প জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও বাগাড়ম্বর করে জ্বালানি খাতে মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। জ্বালানির প্রাথমিক উৎস কিভাবে বাড়ানো যেতে পারে, কিভাবে দেশজ উৎস ও নবায়নযোগ্য খাতকে প্রধান করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় এর কোন কিছুই প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। দেশের বিপুল অর্থ লুণ্ঠিত হয়ে পাচার হয়ে গেলেও সেই অর্থ ফিরিয়ে নিয়ে আসার কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাজেটে নেই। বরং লুণ্ঠনকারীদের লুণ্ঠন চালিয়ে যাবার সমস্ত আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। এই সরকারের প্রদর্শনমূলক উন্নয়নের নীতিতে দেশের জনগণের প্রকৃত আয় বাড়ছে না, কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবন আজ ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশে ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন মাঝারি-ছোট ব্যবসায়ীরা এল সি খুলতে পারছেন না। রেমিট্যান্স কমছে, রপ্তানি আয় কমছে। আর এই সব কিছুর ভার জনগণের উপরে নতুন করে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার জ্বালানিসহ সেবামূলক খাতে জনগণের ব্যয় বাড়াচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক সার্বিক গতিশীলতা ও বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের দিকেও বাজেটে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি বাজেটে গরিবদের ওপর তাদের টিনে বাধ্যতামূলক ফি ধরা হয়েছে। যাদের করযোগ্য আয় নেই তাদের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এটা জবরদস্তিমূলক নীতি, তাই এরকম বাজেট বলাইবাহুল্য গরিববান্ধব নয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এরা গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে লুণ্ঠনই আসলে প্রধান টার্গেট। ফলে এই বাজেট আসলে সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের নামে লুন্ঠনের ধারাবাহিকতা। দেশের বিপুল অধিকাংশ জনগণের জীবনের সংকট মেটাতে ‘ব্যর্থ সরকারের’ এবং ‘অবৈধ সরকারের’ ঔদ্ধত্বের প্রকাশ এই বাজেট।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আমরা মনে করি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারই কেবল বাংলাদেশের জনগণের সত্যিকার চাহিদার কথা মাথায় রেখে একটি জনকল্যাণমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে পারে।’