আশুগঞ্জে আ’লীগের ইউপি চেয়ারম্যান ও নারী সদস্যের পরকীয়ায় তোলপাড়

Slider গ্রাম বাংলা


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দর এবং একই ইউপির সদস্য ইমুনি ইষ্টিয়ানের পরকীয়া নিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে মুখরোচক আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নিন্দা ও রসালো মন্তব্যের ঝড়।

সোলাইমান সেকান্দর নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত ওই ইউপির চেয়ারম্যান ও তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপরদিকে ইমুনি ইষ্টিয়ান একই ইউপির সদস্য ও তালশহর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।

এদিকে, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণের অভিযোগ এনে বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন নারী ইউপি সদস্য। ভ্যানিটি ব্যাগে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরছেন ওই সদস্য। এ ঘটনা জানাজানি হলে নারী সদস্যকে তালাক দিয়েছেন তার স্বামী। তবে নারী ইউপি সদস্যের সর্বনাশের দায় অস্বীকার করছেন চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দর।

সম্প্রতি ইউপি সদস্য ইমুনি ইষ্টিয়ান ইউপি চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দরের বিরুদ্ধে প্রথমে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও পরবর্তীকালে বিয়ের প্রলোভনে সাত মাস ধরে নিয়মিত ধর্ষণের অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ইমুনি ইষ্টিয়ান প্রথমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে অভিযোগ করেন এবং ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভর্তি হন হাসপাতালে। পরে খোলাখুলিভাবে কথা বলেন মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হবার পাশাপাশি কিছু নেতার মধ্যস্থতায় ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে ঘটনার রফাদফার খবরও ছড়িয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য যে, গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সোলাইমান সেকান্দর। আর ওই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচিত হন ইমুনি ইষ্টিয়ান। সূত্র জানায়, একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আরেকজন ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী- সে সুবাধে নির্বাচনের বছরখানেক আগে থেকেই ইমুনি ইষ্টিয়ানের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন সোলাইমান। দুজনই নির্বাচিত হবার পর তা রূপ নেয় পরকীয়ায়। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মতো দু’জন মিলে ঘুরে বেড়ান সর্বত্র।

তবে ইউপি সদস্য ইমুনি ইষ্টিয়ান জানান, নির্বাচনের আগে সোলাইমান সেকান্দরের সাথে রাজনৈতিক কারণে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। দুজন একই পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবার কারণে এ সম্পর্ক আরো গভীর হয়। এ সুবাধে চেয়ারম্যান অনেকদিন ধরেই তার সাথে অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেকে সেভ করে রাখছিলেন। গত প্রায় সাত মাস আগে তিনি জন্ম নিবন্ধনের স্বাক্ষর আনতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে চেয়ারম্যান নিজের শয়ন কক্ষের দরজা লাগিয়ে তাকে ঝাপটে ধরেন। এরপর বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করেন। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ঘটনা কাউকে না জানাতে বলেন। এরপর থেকে চলতে থাকে দু’জনের মধ্যে নিয়মিত আদান-প্রদান। দিনের পর দিন ঢাকায় গিয়ে হোটেল অভিসারে রাত্রীযাপন করতেন তারা। এ সময় চেয়ারম্যান তার সাথে নারী সদস্যকেও মদ্যপানে বাধ্য করতেন। সর্বশেষ গত ১৯ মে ঢাকার হোটেল অভিসারে রাত কাটান তারা।

এরইমধ্যে চেয়ারম্যান-নারী ইউপি সদস্যের বাঁধভাঙ্গা পরকীয়ার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মহলে কানাঘুষা শুরু হলে গত ২৬ মে নারী ইউপি সদস্যের স্বামী তাকে তালাক দেন। এরপর তিনি চেয়ারম্যানকে বিয়ের চাপ দিলে চেয়ারম্যান এই মুহূর্তে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।

নিরূপায় হয়ে নারী ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের স্ত্রীর কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে ঘটনা বলেন। তার কথা শুনে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ৫ বছর পর বিয়ে হবে বলে একটি এগ্রিমেন্ট করতে বলেন। এতে বিষয়টি আরেকটি প্রতারণা বুঝতে পেরে ইউপি সদস্য ইমুনি ইষ্টিয়ান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী সফিউল্লাহ মিয়ার কাছে অভিযোগ করেন। হাজী সফিউল্লাহ মিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য চেয়ারম্যানকে তার অফিসে ডেকে আনেন। সেখানে চেয়ারম্যানের লোকজনও আসেন। তবে চেয়ারম্যান বিয়েতে সম্মত না হওয়ায় সালিশ ভেঙে যায়।

পরদিন ইউপি সদস্য ইমুনি ইষ্টিয়ান ২৭ মে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২৯ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, তার সাথে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। তবে তিনি বিয়ে ছাড়া মানবেন না। তাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সময় সাংবাদিকরা তার বক্তব্য রেকর্ড ও ভিডিও ধারণ করেন।

পরে ওইদিন রাতে ইউনিয়নের মৈশারে আরেক নারী ইউপি সদস্যের বাড়িতে বসে ৬ লাখ টাকায় চেয়ারম্যানের অপকর্মের রফাদফা করা হয়। ইউপি সদস্য সাবিনার বাড়িতে হওয়া এ সালিশ সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন জয়, তালশহর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য রশিদ মিয়া এবং অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দর। এতে ছয় লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি জোরপূর্বক আপস মীমাংসা করা হয়।

তবে এর আগে নারী ইউপি সদস্য চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে না করলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। এমনকি ব্যাগ থেকে বিষের বোতল বের করে দেখান- যা সাংবাদিকদের ধারণ করা ভিডিও রেকর্ডে রয়েছে।

তবে তালশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দর সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করে বলছেন, ইউনিয়নের বরাদ্দ নিয়ে মেম্বারদের সাথে অনেক সময় ঝামেলা হয়। কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এমন কথা রটিয়েছে। এসব কথা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *