সরকারবিরোধী আন্দোলনকে আরও চাঙ্গা করতে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করেছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে ঢাকায় সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখাল দলটি। গতকাল শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে এ শোডাউন করা হয়।
‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ’ এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এই কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজধানীর বাড্ডা সুবাস্তু নজর ভ্যালি টাওয়ারের সামনে থেকে রামপুরা আবুল হোটেল পর্যন্ত মহানগর উত্তর এবং বাসাবো খেলার মাঠ থেকে মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। উভয় কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়া আহ্বান জানান সিনিয়র নেতারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ উভয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। প্রত্যেক থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
কূটনীতিতে ব্যর্থ সরকার পাগলের মতো আচরণ করছে- মোশাররফ : বাড্ডার সুবাস্তু ভ্যালি টাওয়ারের সামনে থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বেলা সাড়ে তিনটায় কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় শেষ হয়।
কর্মসূচি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ড. মোশাররফ বলেন, সরকার আমাদের দেশে যেসব বৃহৎ দেশের কূটনীতিক আছেন, তাদের যে বিশেষ নিরাপত্তা স্কট ছিল- তা প্রত্যাহার করেছে। গত ৫১ বছরেও বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তার অর্থ হচ্ছে, এই সরকার কিন্তু কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে আজকে পাগলের মতো আচরণ করছে। দেশে-বিদেশে আর এই সরকারের কোনো সমর্থন নেই, ক্ষমতা নেই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ড. মোশাররফ বলেন, কোনো স্বৈরশাসক-ফ্যাসিস্ট নিজে থেকে ক্ষমতা ছেড়ে যায় না। এই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকেও বিদায় করতে গণঅভ্যুত্থানের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এই সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে, দেশের অর্থনীতি লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, দেশের আইনি ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে, সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে। ডলার সংকটের কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। দেশের গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্ত গবিব হচ্ছে। এ অবস্থার পরিত্রাণ ঘটাতে এই সরকারকে সরাতেই হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, ডা. রফিকুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, তাবিথ আউয়াল, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বজলুল বাছিত আনজু, জিএম শামসুল হক, শামীম পারভেজ, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিত উলফাত, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জাসাসের লিয়াকত শিকদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।
সরকারের লোকজন স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত- মির্জা আব্বাস : দুপুর ২টা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বাসাবো বালুর মাঠের কাছে নেতাকর্মীরা সমবেত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর পদযাত্রা শুরু হয়ে মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, গ্যাসের দাম আবার নাকি বৃদ্ধি করবে। মনে হচ্ছে এই সরকারের সবার ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রম) রোগ হয়েছে। এই কয়েকদিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে- এরা হয়তো ভুলে গেছে। কয়েকদিন আগে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে- ওরা হয়তো ভুলে গেছে। তিনি বলেন, দেশে যেভাবে লুটপাট হচ্ছে- ওটা ওরা ভুলে গেছে। ভোট চুরি করে নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে, এটাও তারা ভুলে গেছে। এরা সব ভুলে যায়, এদের ডিমেনশিয়া হয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, দিনের ভোট রাতে করছেন, লুটপাট করেছেন, রিজার্ভ চুরি করেছেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, সব লুটপাট করেছেন- এখন বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আজকে এই বিশাল জনগণকে নিয়ে আমরা পদযাত্রা করব, এই পদযাত্রা শুরু হলো। আমরা এই পদযাত্রার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে ইনশাআল্লাহ আমাদের পদযাত্রা থামবে। এ ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নাই।
এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচিতে জনগণের বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করেছে সরকারের অবৈধ রাজসিংহাসন টলমল করছে। তিনি আরও বলেন, এই পদযাত্রা কর্মসূচি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য শুভসূচনা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে অংশ নেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, হাবিবুর রশীদ হাবিব, তানভীর আহমেদ রবিন, মোশাররফ হোসেন খোকন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নুরুল ইসলাম নয়ন, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ।