তেল, চিনি, আদা, রসুন, পেঁয়াজসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম কেবল বাড়ছে। সস্তার সবজির বাজারেও উত্তাপ বাড়ছে। দাবদাহের প্রভাবে ঈদের পর সবজির দাম একদফা বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে নতুন করে ঘূর্ণিঝড় মোখার অজুহাতে তরিতরকারির দাম আরেক দফা বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজারে বেশির ভাগ সবজিই এখন নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। বিভিন্ন সবজির দাম নতুন করে বেড়ে শতকের ঘরে ঠেকেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সবজির পেছনে হঠাৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় হাঁসফাঁস মধ্যবিত্তসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের।
রাজধানীর কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট বাজারে সবজির দোকানের সামনে আক্ষেপ করে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, পেনশনের টাকায় সংসার চালানো কঠিন। এর মধ্যে সবকিছুর দাম কেবল বাড়ছেই। কিছুদিন আগে যে কচুর লতি ৮০ টাকা ছিল, তা আজ (মঙ্গলবার) ১০০ টাকা, যে লাউ ৬০-৭০ টাকা কিনেছি সেটা আজ ৯০ টাকা, ১০-২০ টাকায় এখন একমুঠো কাঁচা মরিচও মিলছে না। করলা, বেগুন, কচুরমুখী, বরবটির দাম নতুন করে বেড়েছে। পাশের আরেক ক্রেতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. হারুন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা হয়েছে টেকনাফে, দেশের অন্য জেলাগুলোতে তো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অথচ মোখার অজুহাতে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে।
বাজারঘুরে দেখা গেছে, কচুরমুখীর কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা। শতকের ঘর ছুঁয়েছে করলা ও কাঁকরোলও। বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে। পটোল, ঝিংগা, বরবটিও কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। কোথাও কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। ঢেঁড়সের কেজিও ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি জালি কুমড়া ও লাউয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা ৯০ টাকায়। পেঁপের দাম হঠাৎ এক লাফে অনেকখানি বেড়ে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। ধনেপাতার কেজি হঠাৎ বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা।
আগের মতো শসা ৬০ টাকা ও টমেটো ৪০ টাকা কেজি, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচাকলার হালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন ফুলকফি পাওয়া গেলেও তাতে হাত পুড়ছে ক্রেতাদের। প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। অন্যদিকে সবজির বাজারে উত্তাপ থাকলেও শাকপাতার বাজারে দর অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে।
যাত্রাবাড়ী বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জালাল বলেন, শীতকালীন সবজি ফুরিয়ে গেছে। অনেক সবজির মৌসুমও এখন শেষের দিকে। তার ওপর তাপমাত্রা অত্যধিক হওয়ায় সবজি কম ফলছে। এ কারণে সবজির সরবরাহ কম, দামও বাড়তি। এর মধ্যে আবার ঘূর্ণিঝড় মোখা গেছে। একই কথা জানালেন কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট বাজারের সবজি বিক্রেতা কিরণও। তিনি বলেন, গরমে ফলন কমেছে। এখন আবার ঘূর্ণিঝড়ে সরবরাহ কমেছে। তাই দাম হঠাৎ বাড়তি রয়েছে।
এদিকে রাজধানীতে সবজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মূলত মৌসুম ফুরিয়ে আসায় দাম বাড়তি। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে দাম বাড়েনি। কারওয়ান বাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী বলরাম চন্দ্র বলেন, দাবদাহের কারণে সবজি সরবরাহ কিছুটা কমেছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে দাম বাড়ার কথা নয়। কোনো কোনো ব্যবসায়ী হয়তো এ অজুহাতে অতিরিক্ত দামে সবজি বিক্রি করছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানও বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই চিড়েচ্যাপ্টা সাধারণ ভোক্তারা। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা নৈতিক ব্যবসা করছেন না। সুযোগ পেলেই নানা অজুহাতে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বাজারে নিবিড় নজরদারি প্রয়োজন। সবজির ক্ষেত্রে হাত বদলের সংখ্যা কমাতে হবে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে খরচ ও ভোগান্তি কমাতে হবে।