গাজীপুর সিটিতে আজমতের ‘গলার কাটা’ জাহাঙ্গীর!

Slider টপ নিউজ


গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আজমত উল্লাহ খান ছিলেন টঙ্গী পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত মেয়র। পরে টঙ্গী পৌরসভা ও গাজীপুর পৌরসভা নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠনে তার অবদানও ছিল উল্লেখ করার মতো। ২০১৩ সালে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও দল থেকে তাকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে ধরাশয়ী হন তিনি।

এ ব্যর্থতায় পরেরবার আজমত উল্লাহ খানকে মনোনয়ন দেয়নি দল, দেওয়া হয়েছিল জাহাঙ্গীর আলমকে। এরপরও থেমে থাকেনি তিনি। নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাজনীতির মাঠে ছিলেন সক্রিয়।

হঠাৎ করে জাহাঙ্গীর আলম বেকায়দায় পড়লে ফের আলোচনায় আসেন আজমত উল্লাহ খান। অবশেষ নানা নাটকিয়তার পর গাজীপুর সিটির তৃতীয় নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপি নির্বাচন বর্জনের পথ বেছে নিলেও এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতের নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া সহজ হবে না বলে মনে করছেন অনেকেই। কেননা, গাজীপুর আওয়ামী লীগে কোন্দল একপ্রকার ‘ওপেন সিক্রেট’।

আজমতের ‘গলার কাটা’ জাহাঙ্গীর

২০১৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনের সময় মনোনয়ন নিয়ে আজমত উল্লাহ খান ও জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে দ্বৈরথ শুরু হয়। জাহাঙ্গীরের বিরোধেই আজমত উল্লাহ পরাজিত হন, এমন কথাও বলেছিলেন অনেকেই। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে দলেও। ২০১৫ সালে আজমত উল্লাহ খান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এতে মহানগর আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

পরে আলাদা ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে জাহাঙ্গীর আলমের বিতর্কিত অডিও-ভিডিও ক্লিপ নিয়ে সরব হয় আজমত উল্লাহর সমর্থকরা। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলনে নেমে নানা কর্মসূচি পালন করে এ ঘটনায় আলোচনায় আনেন। এরপর জাহাঙ্গীর আলমকে দল ও মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমকে চলতি বছরেই দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে, গত বছরের ১৯ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আজমত উল্লাহ পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই কমিটির কোথাও জাহাঙ্গীর সমর্থকদের জায়গা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনভাবেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে গাজীপুর মহানগরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

অন্যদিকে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী প্রস্ততি শুরু করেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও চাপ বাড়ছে তার ওপর। কেন্দ্র যদি কোনোভাবে তাকে নিবৃত্ত না করে, তাহলে জাহাঙ্গীর আলম আবারও নির্বাচন করবেন, তা অনেকটাই নিশ্চিত। সিটি নির্বাচন সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ইভিএমের ভোটকে স্বাগত জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থকরা।

তফসিল ঘোষণার পরই জাহাঙ্গীর আলম বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী প্রস্ততি শুরু করেছেন। ইফতার ও সেহেরিতে তার বাসায় বিপুল সংখ্যক মানুষ নির্বাচনী প্রস্ততিমূলক কাজ করছেন প্রতিদিন। ইতোমধ্যেই অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছেন তিনি। তার কর্মী-সমর্থকদের লক্ষ্য হচ্ছে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও যেকোনো প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচনী মাঠে থাকবেন তারা। কেননা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এখনো জাহাঙ্গীর আলমের জন্য সহানুভুতি রয়েছে।

মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর কথা হয় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহানগরে তার বিপুল সংখ্যক কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। তিনি ভোটারদের কাছে যাবেন। তারা যদি মনে করেন তার নির্বাচন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তাহলে তিনি তা ভেবে দেখবেন।

মনোনয়ন পাওয়ার পর আজমত উল্লাহ খান দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন, এবার সিটি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। দলীয় কোন্দলের বিষয়ে ও দলের কেউ যদি নির্বাচন করে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো দেখবে আমাদের দল। এসব কোনো সমস্যা নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *