রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করা সেই মমিনুর এখন ইংরেজির প্রভাষক

Slider বাংলার সুখবর


অর্থের অভাবে বারবার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও মনোবল হারাননি মো. মমিনুর রহমান। পড়ালেখার খরচ যোগাতে তিনি রিকশা চালিয়েছেন। সেই অর্থ দিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এখন সেই মমিন একটি মাদ্রাসার প্রভাষক পদে চাকরি পেয়েছেন। রিকশাচালক থেকে তিনি এখন ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক।

মো. মমিনুর রহমান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মধ্যকুমরপুর গ্রামের মো. নুর ইসলাম ও ময়না বেগম দম্পতির ছেলে। এ বছর তিনি কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

মমিনুর বলেন, ‘দিনমজুর বাবা পড়াশোনার খরচ দিতে হিমশিম খেতেন। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলেজে ভর্তি হই। মা বিভিন্নভাবে টাকা জোগাড় করে দিতেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পায়। কিন্তু অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিছুতেই টাকা জোগাড় হচ্ছিল না। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে রিকশা চালাতে যায়। একটি গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে কয়েকদিন চালাই। ভর্তির প্রয়োজনীয় টাকা ছাড়াও কিছু উদ্বৃত্ত টাকা আয় করে কুড়িগ্রামে ফিরে সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হই। এরপর যখনই টাকার সংকটে পড়েছি তখনই কেরানীগঞ্জে গিয়ে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেছি। অনার্স তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত আমি বাড়িতে ঈদ করিনি। প্রতি ঈদে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়ে টাকা জোগাড় করেছি। এভাবে তৃতীয় বর্ষ শেষ করি। পরে চতুর্থ বর্ষে উঠে টিউশনি করে বাকি পড়াশোনা শেষ করি। এখনো টিউশনি করে নিজের ও পরিবারের খরচ জোগাচ্ছি। আমার বাবাকে এখন আর কাজ করতে দেই না। বর্তমানে টিউশনির আয় দিয়ে পরিবার ও ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ বহন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, গত ১০ মার্চ প্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। বাকি প্রক্রিয়া শেষে সেখানেই যোগদান করবো। আমার এই ক্ষুদ্র সফলতায় যারা আমার পাশে ছিলেন, বিভিন্নভাবে আমাকে সহায়তা করেছেন সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও সহায়তা করার জন্য আমার বিভাগের সাবেক শিক্ষক মুকুল স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

মমিনুরের চাকরি হওয়ায় খুশি তার বাবা নুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। আল্লাহ রহমত করছে। টাকার অভাবে ছেলে নিজে কাজ করে পড়াশোনা করছে। এখন তার আয় দিয়ে আমার পরিবার চলছে। এর মধ্যে তার চাকরির খবরে আমি ও তার মা অনেক খুশি।’

মমিনুরের সংগ্রাম ও সফলতা নিয়ে তার বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও বর্তমানে উলিপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু জোবায়ের আল মকুল বলেন, ‘শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় মমিনুর মাঝে মাঝে কুড়িগ্রামের বাইরে কাজ করতে যেত। পরিশ্রম ও একাগ্রতার ফসল হিসেবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে। দরিদ্রতা যে সফলতায় বাধা হতে পারে না সেটা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরবে।’

কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নূর বখ্ত বলেন, ‘মমিনুরের মতো একজন সংগ্রামী ও পরিশ্রমী শিক্ষক পেয়ে আমরা আনন্দিত। তিনি জীবনে অনেক স্ট্রাগল করেছেন বলে তার শিক্ষকদের কাছে জেনেছি। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *