নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। গত ৭ মার্চ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে চিঠিটি প্রকাশিত হয়।
ওই চিঠির বিষয়ে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যিনি এত নামীদামি, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তার জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে অ্যাডভারটাইজমেন্ট দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়।’
বিকেল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। কাতার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যখন কাতার ছিলেন, তখন ৪০ জন বিদেশি নাগরিকের একটি বিবৃতি বা একটি আপিল এসেছিল এবং এটা ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- এটা আপনার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। এটা পেয়েছেন কি না এবং বিবৃতি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানতে চাই?’
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি একটা ভুল করছেন। এটা বিবৃতি না, এটা অ্যাডভারটাইজমেন্ট। যে ৪০ জনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা আমাদের বিশেষ একজন ব্যক্তির পক্ষে। আমার একটি প্রশ্ন আছে। সেটি হলো, যিনি এত নামীদামি, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তার জন্য ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে অ্যাডভারটাইজমেন্ট দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়? এটাই আমার প্রশ্ন আর কিছু না।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কতগুলো আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী সব চলবে এবং সেটা চলে। আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করি। যারা ট্যাক্স ঠিক মতো দেয় তার জন্য আলাদা বিভাগ আছে। কেউ যদি এ সমস্ত বিষয়ে আইন ভঙ্গ করে বা শ্রমিকদের কোনো অধিকার কেড়ে নেয়, শ্রম আদালত আছে সেটা দেখে।’
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ড. ইউনূসের জন্য বিশেষ কিছু করার নেই বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারপ্রধান হিসেবে আমার তো কিছু করার নেই। কাজেই এখানে আমাকেই বা কেন বলা হলো? এর বাইরে আমি আর কী বলব! পদ্মা সেতু কিন্তু আমরা করে ফেলেছি।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে ৪০ বিশ্বনেতা শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আপনাকে লিখছি, যারা আপনার দেশের জনগণের সাহস ও উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করে। আমাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের নেতা ও সমাজসেবক আছেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতো আমরাও বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ও সারা বিশ্বে গৃহীত উদ্ভাবনগুলো দ্বারা অনুপ্রাণিত। আপনার দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের একজন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখছি। ড. ইউনূসের ভালো থাকা, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবিক উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে চলছেন, তা অব্যাহত রাখতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে।’
চিঠিতে স্বাক্ষর করেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডালি হ্যারিস, সংগীতশিল্পী ও অধিকারকর্মী বোনো, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট লর্ড মার্ক ম্যালোক ব্রাউন, ড্যালেয়ার ইনস্টিটিউট ফর চিলড্রেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা লে. জে. (অব.) রোমিও ডালাইরা, এমেরিটা চিলড্রেন’স ডিফেন্স ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মারিয়ান রিট এডেলমান, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স, সংগীতশিল্পী পিটার গ্যাব্রিয়েল, নাসার সাবেক মহাকাশচারী রন গারেন, ইউনিসেফের সাবেক উপনির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কুল গৌতম, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস, হলিউড অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন গ্লাসগো ক্যালেডিনিয়ান ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও এমিরেটাস অধ্যাপক পামেলা গিলিসসহ ৪০ বিশ্বনেতা।