পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
এ ঘটনায় একজন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদ পাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে।
নিহতের তথ্য আমাদের সময়কে নিশ্চিত করেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা একত্র হয়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় এসে জড়ো হন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপরে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন মুসল্লিরা।
এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন পথচারীসহ সাধারণ জনতা। একপর্যায়ে মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পঞ্চগড় পৌরসভার আহাম্মদ নগর এলাকায় কাদিয়ানিদের জলসা অভিমুখে রওয়ানা দেন। এ সময় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। পরে সেখান থেকে মুসুল্লিরা পিছু হটে বিক্ষোভ শুরু করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন।
পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় আরিফুর রহমান (২৮) নামের এক সাধারণ জনতা গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এতে পুলিশ সাংবাদিকসহ কমপক্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হন।
এদিকে, মুসল্লিদের হামলায় বিদ্যুতের কয়েকটি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলা শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বিকেলে মুসল্লিদের একাংশ পঞ্চগড়ের পৌরসভা এলাকার কাদিয়ানিদের সালানা জলসা অভিমুখে রওনা হয়। এ সময় তারা কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের ২৫ থেকে ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কারী মো আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করি। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেই। কিন্তু আজকে আমাদের কোনো বিক্ষোভ মিছিল ছিল না। প্রশাসনের ফোন পেয়ে আমরা তাদের সড়ক থেকে সড়িয়ে নিয়ে চলে আসি। কে বা কারা মিছিল করেছে জানি না। আমরা কোনো মারামারি বা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করিনি।’
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা আয়োজন কমিটির মিডিয়া কর্মকর্তা মাহমুদ আহমেদ সুমন বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই সালানা জলসা করি। আমরা কারও কোনো সমস্যা করিনি। হঠাৎ কিছু বিপথগামী লোকজন আমাদের বাড়িঘরে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে। বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের আয়োজক কমিটিকে সালানা জলসা বন্ধ করতে বলেছি। তবে হামলাকারী শনাক্তে আমরা চেষ্টা করছি।’