অশ্লীল ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের অপসারণ দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। ডাবলু সরকারের ছোটভাই নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ সরকার সেডুর নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন মাননবন্ধনকারীরা।
‘সচেতন রাজশাহীবাসী’র ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনের ব্যানারে লেখা ছিল ‘ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও রাজনীতিতে অশনি সংকেত ও সমাজের জন্য বিপদজনক। অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে।’
মানববন্ধনে অ্যাডভোকেট আবু রায়হান মাসুদ বলেন, ‘যখন রাজশাহীকে এই দেশের শ্রেষ্ঠ নগরী হিসাবে দাঁড় করানো গেছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো দেশএগিয়ে যাচ্ছে, তখন কতিপয় হাইব্রিড দুষ্টু নেতার নৈতিক স্খলনের ভিডিও চিত্রকে আমরা অভিনন্দন তো জানাতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘এই বছর জাতীয় নির্বাচনের বছর। এই বছর এখানে সিটি নির্বাচনও হবে। কাজেই ডাবলু সরকারের এহেন অনৈতিক কর্ম জনমনে যে প্রভাব ফেলছে, এর প্রতিউত্তর মহানগরবাসী ব্যালটের মাধ্যমে দিয়ে দলে শেখ হাসিনার ক্ষতি, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ক্ষতি। কাজেই প্রতিকারে যেতে হবে। এমন ব্যক্তিকে গ্রহণ করার জন্য রাজশাহীবাসী প্রস্তুত নেই। আমি আশা করব, কাল থেকে আওয়ামী লীগের সবাই এই ডাবলু সরকারের শাস্তি চেয়ে রাজপথে নেমে আসবে।’
মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, ‘আজ সারাদিন রাজশাহীবাসীর কাছে যাওয়া ছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের কাছে আমরা যাব। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে বিচার চাইব। যোগাযোগ করব দলের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামালের সঙ্গেও। আমরা আবার আগামীকাল জিরো পয়েন্টে সব পেশার মানুষকে নিয়ে একত্রিত হব।’
তাদের এ ঘোষণার পরেই হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীলা জানান, মানববন্ধন শুরুর কয়েক মিনিট পরই ডাবলুর ছোটভাই শাহনেওয়াজ সরকার সেডু, নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপন্ন সরকার ও মহানগর শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ আলী মুনমুনসহ ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী হানা দেয়। তারা ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
এনিয়ে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে ধাওয়া দিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে এসে হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দেন ডাবলুর আরেক ভাই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার।
এদিকে, ধাক্কাধাক্কির সময় পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ডাবলু সরকারের ভাই সেডু সরকার ঔদ্ধত্যস্বরে বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে মানববন্ধন! আপনারা কী করছেন?’ এ সময় হামলাকারীরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের গালিগালাজ করেন।
হামলার বিষয়ে ঘটনাস্থলে কথা বলতে চাইলে ডাবলু সরকারের ভাই শাহনেওয়াজ সরকার সেডু কোনো উত্তর দেন নি। পরে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘সামনাসামনি আসেন। মোবাইলে কথা হবে না।’
ঘটনাস্থলে থাকা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘যারা মানববন্ধন করছিল, তারা ভালোভাবেই চলে গেছে। তাদেরকে আক্রমণ করতে পারেনি।’
মানববন্ধনের অনুমতি ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে তো প্রায়ই ছোটখাটো মানববন্ধন হয়। তারা আমাদের জানিয়েছিলেন যে একটা মানববন্ধন করবেন।’ হামলা হলো কেন সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাহলে তো আপনারা জানেন। সেভাবেই নিউজ করেন।’
এর আগে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেন ডাবলু সরকার। ওই ভিডিওতে দেখতে হবহু ডাবলু সরকারের মতোই একব্যক্তিকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। যদিও ডাবলু সরকার দাবি করেছেন, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির মুখ তার। তবে শরীরের নিচের অংশ অন্য কারও।