আগামী নির্বাচন নিয়ে যা বললেন নতুন রাষ্ট্রপতি

Slider জাতীয়

আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষেভাবে সম্পন্ন করতে যে যে পদক্ষেপ নেওয়ার তাই নেবেন বলে জানিয়েছেন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ সোমবার বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মাত্র ৮-১০ মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। আমার এই মুহূর্তের দায়িত্ব হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে মনোযোগ দেওয়া। যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত হয়। এটা আমাদের এখন দরকার। আমরা বলি যে অরাজনৈতিক দাবি তুলে, সংবিধানের বাইরে দাবি তুলে- সেটা করা সম্ভব নয়। আমরা সংবিধানের বাধ্যগত।’

তিনি বলেন, ‘এই সংবিধানের ৫৮/সি- এটা ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়। এটি এখন সংবিধানের অংশ নয়। সংবিধানের অংশের মধ্যে থেকে আমাদের সকল দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন তার পুরো দায়িত্ব পালন করবে।’

নির্বাচন সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা তুলে ধরে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ নির্বাচনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির কিছু কিছু দায়িত্ব আছে যে নির্বাচন কমিশনকে সঠিকভাবে কাজ করতে করতে যেসব অন্তরায় সৃষ্টি হয় সেই অন্তরায়কে দূর করা। নির্বাচনী পরিবেশকে সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখা।’

নতুন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা লেখা ছিল, বহু সময় ধরে। কিন্তু এ কমিশন গঠন করার প্রক্রিয়ায় কেউ হাত দেয়নি। কিন্তু এইবার আমাদের নেত্রী, জাতীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘‘আমি সংবিধানের ভেতরে থেকেই সংবিধানের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন করব’’। এবং তিনি তাই করলেন। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় তিনি নির্বাচন কমিশন আইন করলেন। এবং সেই আইনের অনুবলে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা (নির্বাচন কমিশন) সম্পূর্ণ স্বাধীন, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। সেই সিইসি থেকে ইসিরা সব সার্চ কমিটির মাধ্যমে মনোনীত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন বলেই গাইবান্ধার উপনির্বাচনে কমিশন তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছে।’

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমি মনে করি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সংঘাত ভুলে গিয়ে, ২০১৪-২০১৮ সালের মতো সংঘাতে না গিয়ে, মানুষের ক্ষতি না করে, জান-মালের ক্ষতি না করে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তাহলেই এ দেশের মঙ্গল, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে। মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগোবে এবং দেশে একটি সত্যিকারের সরকার, শক্তিশালী সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৭ ধারায় বলা আছে যে দেশের মালিক জনগণ। তাহলে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই তো তাদের জন্য ভালো-মন্দের বিষয়টি তাদেরই দ্বারাই তো প্রয়োগ করা সম্ভব এবং কাজ করা সম্ভব।’

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাকে এখন… এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সারাদেশে। নির্বাচনের ১০ মাস আগে থেকেই যে সমস্ত সংঘাত সৃষ্টি করা…।’

সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে আপনার উদ্যোগ থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক, এটা তো শুধু সরকারের কামনা নয়, সারা বিশ্বের কামনা। সারাদেশের সকল জনগণের কামনা। যে সব দলের অংশগ্রণে সে যতেই ছোট দল হোক, যতই বড় হোক, জোট হোক- সকলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে তাদের নিজেদের স্বার্থেই আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি নিশ্চিত করি যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে… তারা (বিরোধীরা) সংবিধানের সংশোধনীর কথা বলে, নানা যুক্তি দেখায়, যারা দেখায় তাদের যুক্তি তাদের কাছে আছে। আমি এটা নিয়ে বিতর্কে যাব না। তবে সংবিধানের ভেতরে থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমি সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে চাই।’

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘তাহলে আমাদের দায়িত্ব কী? সরকারের দায়িত্বটা কী? সরকারের দায়িত্ব হলো নির্বাচন কমিশনকে তাদের যে প্রদত্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেই ক্ষমতার মধ্যে থেকেই তারা যেন সকল দায়িত্ব পালন করে।’

তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনো কোনো সময় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে। জাতীয় দুর্যোগ দেখা যায় বা নির্বাচন নিয়ে কোনো অরাজকতা অবস্থা দেখা যায় বা দেখা যায় যে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী পরিবেশটাকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে সময় রাষ্ট্রপতির কিছু কিছু কাজ করার থাকে। আমি এ ব্যাপারে পিছপা হব না, কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি দেশ স্বাধীন করেছি, এতটুকু রক্ত তো দিয়েছি দেশের জন্য।’

নতুন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যে অবস্থার… নৈরাজ্য সৃষ্টির যদি চেষ্টা করা হয় সেক্ষেত্রে আমার যে ভূমিকা সে ভূমিকা আমি রাখব। কিন্তু আমি চাইব একটি ন্যায়ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে আমি যেন আমার ক্ষমতাকে প্রয়োগ করি। যাতে সেখানে পক্ষপাতিত্বের চিহ্নও যাতে না থাকে। মানুষ উপলদ্ধি করতে পারে যে প্রেসিডেন্ট যে কাজটি করেছে তা দেশের জন্য করেছে। যদি প্রয়োজন হয়, আর যদি প্রয়োজন না হয়… যদি মানুষের প্রত্যাশা হয় আমি নিরপেক্ষভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব। আমি মানুষের মধ্যে যেন এই চিন্তাধারাটা যদি আসে আসুক, এটাই আমি চাই যে আমি আমার ক্ষমতাটাকে প্রয়োগ করেছি শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে। কাউকে অবদমিত করার স্বার্থে নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব সেখানে যদি ভুক্তভোগী হয় শাসকদল, হলে হতে পারে। যদি বিরোধীদল হয়, হলে হতে পারে। কিন্তু আমি চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি সেখানে আমার দায়িত্ব পালন করব। আমি ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *