প্রচ্ছদে ভিনদেশী সংস্কৃতি জলছাপে মূর্তির প্রতিচ্ছবি

Slider শিক্ষা

ভিনদেশী সংস্কৃতির নানা উপকরণ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে নতুন পাঠ্যসূচির আলোকে রচিত পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ। একইভাবে ব্যাককভারেও স্থান পেয়েছে নানা ধরনের পুরাকীর্তির নামে দেব-দেবী আর বিভিন্ন মূর্তির ছবি। জলছাপে ছাপানো এসব মূর্তির সাথে মুসলিম শিক্ষার্থীর সংস্কৃতির কোনোই মিল নেই। অথচ কৌশলে এসবই শেখানো হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষাবর্ষ ২০২৩ সালের জন্য প্রণীত নতুন পাঠ্যসূচির আলোকে রচিত সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী ও অনুসন্ধানী নামের দু’টি বইয়েরই প্রথম প্রচ্ছদে এবং পেছনের প্রচ্ছদেও ময়ূরের ছবি স্থান পেয়েছে। একইভাবে সপ্তম শ্রেণীর ইংরেজি ভার্সনের এই বই দু’টিতেও একই প্রচ্ছদ বা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতি এবং জাতীয় বিষয়াদি বা ছবি দিয়েও চমৎকার প্রচ্ছদ তৈরি করা যেত। ময়ূর বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের কোনো পাখির প্রতিচ্ছবিও নয়। এটা ভারতের জাতীয় পাখি। কিন্তু কী কারণে এবং কেনই বা ময়ূরের ছবি এখানে প্রচ্ছদের ছবিতে দেয়া হয়েছে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আলেমসমাজের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি বইয়ের প্রচ্ছদে মূলত বইটির মধ্যকার আলোচ্য বিষয়বস্তুকেই ইনডিকেট করে। যেকোনো বইয়েরই প্রচ্ছদ দেখেই অনুমান করা যাবে বইটি কী বিষয়ে লেখা হয়েছে। কিন্তু এবার নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী ও অনুসন্ধানী পাঠের দু’টি বই এবং ইংরেজি ভার্সনের দুটি বই মোট চারটি বইয়ের প্রচ্ছদ এবং ব্যাককভারে আপত্তিকর ছবি দেয়া হয়েছে। এই ছবিগুলো কোনোভাবেই মুসলিম সমাজ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার ও ইতিহাসের সাথে মিলে না। কোনো একটি ধর্মীয় জাতি-গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়েই এসব প্রচ্ছদ রচনা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে সংযুক্ত করা হয়েছে নানা বিতর্কিত বিষয় ও ছবি। বিশেষ করে প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বর্ণনায় দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি, মৃত্যু ও পরকালের দেবতা ‘আনুবিষ’, সূর্য দেবতা ‘রা’, স্বর্গীয় মাতা ‘আইসিস’, কৃষি দেবতা ‘ওসাইরিস’, যুদ্ধ দেবতা ইত্যাদি দেবতার বর্ণনা দিয়ে পৌত্তলিকতা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেয়েদের উলঙ্গ ছবি, হিন্দুদের মন্দিরের ছবি দেয়া হয়েছে একাধিক জায়গায়। এদিকে এই বই চারটির ব্যাককভারে (পেছনের পাতায়) জলছাপের মধ্যে অসংখ্য মূর্তির ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে। সবগুলো ছবিই আবার (বার করে) অস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে পেছনের কভারে পাঁচটি সারিতে অসংখ্য মূর্তির ছবি দেয়া হয়েছে। প্রতিটি সারিতে আবার প্রায় শতখানেক মূর্তির ছবি বোঝা যাচ্ছে।
জীবন ও জীবিকা গান শোনা, নাচ, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি যন্ত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেয়েদের ফুটবল খেলা, টিভি দেখা, অনলাইনে কার্টুন দেখার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি: অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি, খেলাধুলার প্রতি প্রবণতা সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভ্রমণের জন্য দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে যেতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদে এভাবে ভিনদেশী সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন মূর্তির ছবি সংযুক্ত করার পেছনে কৌশলে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বদেশীয় সংস্কৃতি ধারণ ও লালনকে নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করেন ইসলামিক স্কলাররা। এরই মধ্যে শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামপ্রিয় তৌহিদি জনতা। তারা সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে ইসলামবিরোধী এসব ছবিসংবলিত প্রচ্ছদ ও বই বাতিল করে নতুন করে পাঠ্যবই ও পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *