ঢাকামুখী ট্রেনযাত্রীদের ওপর বিভিন্ন স্টেশনে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের টঙ্গী জংশনসহ বিভিন্ন স্টেশনে এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় যাত্রীদের মোবাইল মানিব্যাগ লুটে নিয়েছে সরকার দলীয় লোকজন। ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয় যাত্রীদের। ফলে শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকাল থেকে ঢাকামুখী সকল ট্রেন ছিল অনেকটা ফাঁকা। এমনকি ঢাকামুখী ট্রেনের টিকিট বিক্রিও বন্ধ করে দেয় স্টেশনগুলো।
এদিকে ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও সরকার দলীয় লোকজনকে তৎপর দেখা গেছে। সকাল থেকেই মহাসড়কে কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। মহাসড়ক ছিল রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যানবাহনের দখলে। পুলিশের চেকপোস্টের পাশাপাশি সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ঢাকামুখী মোটরবাইক ও ক্ষুদ্র পরিবহনের যাত্রীদের তল্লাশির নামে হয়রানি করে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। মহাসড়কে খন্ড খন্ড মিছিলও বের করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ট্রেন যাত্রীরা অভিযোগ করে জানান, শনিবার ভোর সাড়ে ৪টায় টঙ্গী জংশনে নোয়াখালী এক্সপ্রেস (এলিভেন আপ) ট্রেনে লাঠি সোটা নিয়ে জয় বাংলা স্লোগানে হামলা চালিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয় একদল যুবক। এ সময় যাত্রীদের পিটিয়ে ট্রেন থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়া হয়। প্রায় ৬ ঘণ্টা ট্রেনটিকে টঙ্গী জংশনে আটকে রাখা হয়।
তবে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার রাকিবুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে করে বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নোয়াখালী এক্সপ্রেস ভোর ৪টা ২০মিনিটে টঙ্গী জংশনে প্রবেশ করে, কমলাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ১০টা ১০মিনিটে।
এদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় টঙ্গী জংশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেনটির বগিগুলো ফাঁকা, কয়েকজন মহিলা ও অসুস্থ যাত্রী বিভিন্ন সিটে গুমাচ্ছেন। এমনকি ট্রেনের গার্ডকেও গুমাতে দেখা গেছে।
নোয়াখালীর সোনাপুর স্টেশন থেকে আসা যাত্রী নুসরাত বেগম জানান, তিনি ঢাকায় বাসা বাড়িতে কাজ করেন। তেজগাঁও যাওয়ার উদ্দেশে শুক্রবার রাত ৭টায় ট্রেনে উঠেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে টঙ্গী স্টেশনে ট্রেন থামলে পুরুষ যাত্রীদেরকে মারধর করে নামিয়ে দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার কাছে যে টাকা ছিল তা খরচ হয়ে গেছে, এখন এই ট্রেন ছাড়া বিকল্প পথে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।
একই স্টেশন থেকে আসা যাত্রী মাহবুব বলেন, টঙ্গী স্টেশনে আসার পর পুলিশ ও সরকারী দলের লোকজন যাত্রীদের তল্লাশির নামে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে এবং যাত্রীদের মারধর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছে। সকল যাত্রী চলে গেলেও পায়ে ব্যথার কারণে তিনি যেতে পারেননি।
তিনি আরো বলেন, আমার কাছে এই ট্রেনের টিকিট, তাই অন্য ট্রেনে যেতে পারছি না। দেশের যে অবস্থা তাতে সঠিকভাবেই চলা যায় না। আবার বেঠিকভাবে চললে তো উপায় নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাথে অন্য ট্রেনের টিকিট পেলে হয়রানির শিকার হতে হবে এই ভয়ে ট্রেনটি ছাড়ার অপেক্ষায় এখানেই দীর্র্ঘক্ষণ বসে আছি। পথে আরো একাধিক স্টেশনে যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। ট্রেন ছাড়ার মূহুর্তে অনেকে দৌঁড়ে এসে লাফিয়ে ট্রেনে উঠেছেন।
এই দেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে মন্তব্য করে অসুস্থ এই ট্রেনযাত্রী আরো বলেন, সব চোর-চুট্টাদের হাতে দেশের ক্ষমতা চলে গেছে। সব খারাপ লোকগুলো আওয়ামী লীগে ঢুকেছে।
নোয়াখালীর সোনাইমুরি স্টেশন থেকে আসা বৃদ্ধ যাত্রী শরিফ উল্লাহ বলেন, টঙ্গী স্টেশনে থামার পরই ৩০ থেকে ৪০ জন বখাটে ধরনের তরুণ লাঠি সোটা নিয়ে ট্রেনের ওপর চড়াও হয়। প্রথমেই তারা লাঠি দিয়ে বগির দরজা জানালায় বারি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর ট্রেনের ভেতর ঢুকে যাত্রীদের মারধর করে বের করে দেয় এবং নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় পুলিশও তাদের সাথে যোগ দেয়।
ট্রেনচালক ইব্রাহিম বলেন, পেছনে কী হয়েছে আমরা বলতে পারবো না। কী কারণে ভোর সাড়ে ৪টার পর থেকে ট্রেনটিকে স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে তাও তিনি জানেন না।
স্টেশন মাস্টার রাকিবুর রহমান বলেন, কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন স্টেশন অতিক্রম করায় নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেন এখনো লাইন ক্লিয়ার পাচ্ছে না। তাছাড়া বিষয়টি কন্ট্রোল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
এদিকে ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে রাজধানীর প্রবেশমুখ টঙ্গীতে দফায় দফায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম সরকারের উদ্যোগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চেরাগআলী এলাকায় মিছিল-টহলে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের মাঝে খিচুরি বিতরণ করা হয়। মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলের নেতৃত্বে দফায় দফায় মিছিল করছে যুবলীগ নেতাকর্মীরা।